খবর৭১ঃ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অতি মাত্রায় পরীক্ষা নির্ভর হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বলেন, ‘সবাই শুধু জিপিএ-৫ পেতে দৌড়াচ্ছে। এটি শুধু পরীর্ক্ষাথী নয়, অভিভাবকদেরও বাড়তি চাপের মধ্যে ফেলছে। সকলে জিপিএ-৫ এর মোহে দৌড়াতে গিয়ে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক চাপ বাড়ছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা চেষ্টা করছি। পরীক্ষা ও সনদ নির্ভরতা কমিয়ে পাঠদানকে আনন্দদায়ক করা হবে।’
বুধবার ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) আয়োজিত বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড প্রদান এবং ২০২০-২০২১ বছরের নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাটা পরীক্ষা নির্ভর। পরীক্ষা মানেই একটা অতিরিক্ত মানসিক চাপ, একটা বোঝা। শুধু শিক্ষার্থীর জন্য নয়, তাদের অভিভাবকদের জন্য, সবার জন্য, পুরো সিস্টেমের জন্য। সঙ্গে একটা সনদ সর্বস্ব ব্যাপার আছে- একটা সার্টিফিকেট পেতে হবে। কিন্তু সেই সার্টিফিকেটের সঙ্গে, একটা কাগজের সঙ্গে আর কি পাচ্ছি?’
পরীক্ষা, কোচিং নির্ভরতাসহ বিভিন্ন চাপে পড়াশোনা শিক্ষার্থীদের আনন্দ হারিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাটা কেমন যেন একটা নিরানন্দ ব্যাপার হয়ে গেছে। এরমধ্যে আমার মনে হয় আনন্দের আর কোনো জায়গা নাই। সারাদিন শিক্ষার্থী পড়ছে, তারপরে গৃহশিক্ষক, কোচিং সেন্টার, পরীক্ষার চাপৃ। তাহলে খেলাধুলা করবার, সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবার, পারিবারিক পরিসরে আনন্দময় পরিবেশ কোথায়?’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জ্ঞানার্জনের উৎস শুধুমাত্র যেন বই না হয়, বই আমাদের শুধু সহযোগিতা করবে। এর বাইরে অনেক কিছু পড়ে শেখা, অ্যাকটিভিটি বেইজড সেটি খুব জরুরি। শিক্ষকের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং তাদের সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা যখন আমরা নিশ্চিত করতে পারবো, তখন আমাদের সত্যিকারের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কাঙ্খিত জায়গায় নিয়ে যেতে পারবো।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কোনো সরকারই সেভাবে শিক্ষায় গুরুত্ব দেননি। গত কয়েক বছরে শিক্ষার যে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে তা তারই কন্যার কারণে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছি। সামনে ৩৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করতে যাচ্ছি। আমরা গুণগত শিক্ষা দিতে পারবো। করোনার কারণে গরীব মানুষের হার বাড়বে। গরীব মানুষকে যদি অ্যাড্রেস করতে পারি তাহলে ঝরে পড়ার হারও কমবে।’
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার মধ্যেও আমরা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা নিয়ে আসতে চাই। আমরা দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করতে চাই। যাতে সবাই কর্মমুখী হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে দুই পক্ষের (জনগণ-সরকার) বোঝাপড়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।’
ইরাব বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ডের প্রথম পুরস্কার দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার শরিফুল আলম সুমন, দ্বিতীয় পুরস্কার ডেইলি সানের সোলায়মান সালমান এবং তৃতীয় পুরস্কার বণিক বার্তার সাইফ সুজন কে প্রদান করা হয়। শিক্ষামন্ত্রীর সৌজন্যে এই পুরস্কারের অর্থ এবং ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাইফুল আলম বলেন, ‘পুরস্কৃত করার মধ্য দিয়ে কাজের স্বীকৃতি এবং আরও ভালো কাজের অনুপ্রেরণা জোগাবে। পেশাদারিত্বের প্রতি অবিচল থেকে কাজ করবেন। তাহলেই সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য পূরণ হবে।’
ইরাব সভাপতি সাব্বির নেওয়াজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সুমনের সঞ্চালনায় বিদায়ী সভাপতি মুসতাক আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ডের বিচারক দৈনিক প্রথম আলোর সহকারি সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টু, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ইব্রাহিম বিন হারুন।
এছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি, ইউজিসিসহ শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবন্দ এবং অভিভাবক প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।