খবর৭১ঃ
দেশে হঠাৎ করে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন দায়িত্ব নেয়া অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছেন, সারাদেশের ধর্ষণসংক্রান্ত মামলাগুলো পাবলিক প্রসিকিউটরদের সহযোগিতায় তালিকা ধরে ধরে দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা তারা করবেন। এছাড়া দেশের আদালতে মামলার যে জট লেগে আছে সেগুলো কীভাবে দ্রুত শেষ করা যায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যে কাজগুলো করে গেছেন, সেই কাজগুলো এগিয়ে নেয়াও তার অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।
রবিবার নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে দপ্তরে এসে আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশ নেন তিনি। পরে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল
আদালতের কার্যক্রম শেষে আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নতুন অ্যাটর্নি জেনারেলকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় তিনি দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা কামনা করেন এবং করোনাভাইরাস রোধে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার অনুরোধ জানান।
অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তিতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণসংক্রান্ত মামলার বিষয়ে দেশের সব আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরদের সঙ্গে কথা করে তালিকা ধরে ধরে নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার যে প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী নিচ্ছেন, সেটা খুবই ইতিবাচক। সমাজে মূল্যবোধটা ফিরিয়ে আনতে হবে। আশা করি এর ফলে অপরাধীরা সতর্ক হবে।
মামলার জট কমানোর উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিচার বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের যেকোনো মামলায় লড়ার জন্যে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মামলায় আসামি কে সেটা দেখবো না। আমি দেখবো মামলা। আইনজীবী হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।
এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘দক্ষতা ও সততায় মাহবুবে আলম এই অফিসটাকে, পদটাকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, আমি চেষ্টা করবো সেটা বজায় রাখার। আমি চেষ্টা করবো তিনি যে উচ্চতা সৃষ্টি করে গেছেন, সেটা ধরে রাখার।’
প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার সিনিয়র ছিলেন। সিনিয়রের হাত ধরেই আইন পেশায় এসেছেন উল্লেখ করে তিনি মাহবুবে আলমের জন্য সবার দোয়া চান।
অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনারা যদি আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন তাহলে দুর্নীতি বন্ধ করা অনেক সহজ হবে। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে যেকোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবো।’
অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে প্রথম কর্মদিবসে দু’জন অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগে অসুবিধার সৃষ্টি হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে সবসময় আসা-যাওয়া থাকেই। ওনারা হয়তো অনেক দিন কাজ করেছেন, ব্যক্তিগত কোনো সমস্যার কারণে তারা হয়ত আর থাকছেন না। আমার সঙ্গে ওনাদের কথা হয়নি। এখন যদি তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয় তাহলে অবশ্যই আরও দুজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেবে সরকার।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অদক্ষতার কারণে কোনো মামলায় যদি রাষ্ট্র হেরে যায়, আর তাতে যদি রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় সেক্ষেত্রে বিষয়টি আমি সরকারের দৃষ্টিতে নিয়ে আসবো। সরকার তখন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
গত ৮ অক্টোবর নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনকে নিয়োগ দেয় সরকার। গত ২৭ সেপ্টেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ইন্তেকাল করায় পদটি শূন্য হয়।