মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সম্মাননা স্মারক, ফুলেল শুভেচ্ছা ও অতিথিবৃন্দের বক্তৃতার মধ্য দিয়েই সরচরাচর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তবে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামবাসী আয়োজন করেছে এক ভিন্নরকমের সংবর্ধনা। যাতে ছিল অকৃত্রিম ভালবাসা আর আবেগ মিশ্রিত শুভেচ্ছা বিনিময়। সমাগম ঘটেছে হাজার হাজার মানুষের। অর্ধশতাধিক গেট স্থাপন করেছে অনেকগুলো সামাজিক সংগঠন। প্রধানমন্ত্রী’র প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হবিগঞ্জে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিল পাস ও শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ বাস্তবায়ন হওয়ায় সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরকে গতকাল শনিবার রিচি গ্রামবাসীর উদ্যোগে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়। জানা গেছে, কয়েকদিন ধরেই চলছিল সংবর্ধনা আয়োজনের কাজ। হবিগঞ্জ শহর থেকে শুরু করে রিচি গ্রাম পর্যন্ত স্থাপন করা হয় অর্ধশতাধিক গেট। যেগুলোতে ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এমপি আবু জাহির এর ছবিসহ নানা ধরণের লেখা। নিজ গ্রামের সন্তানের এই সংবর্ধনা উপলক্ষে দু’দিন ধরেই একে অন্যকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছিলেন রিচিবাসী। গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে বিভিন্ন বয়সের লোকজন জড়ো হতে থাকেন সংবর্ধনাস্থল রিচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। বিকেলের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাঠটি। এরপর আশপাশের দোকানপাঠ ভর্তি হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন এলাকাবাসী। বিকেলে নন্দিত জননেতা এমপি আবু জাহিরকে প্রধান সড়ক থেকেই ফুল ছিটিয়ে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বরণ করে যুবসমাজ।
ছিল বিশাল মোটরসাইকেল শোডাউন। সন্ধ্যার পূর্বে সংবর্ধিত ব্যক্তিত্ব মঞ্চস্থলে গেলে ধরা হয় নানা ধরণের শ্লোগান। তরুণরা বাজাতে থাকেন হরেক রকমের বাঁশি। অনুষ্ঠান শুরু হলেই অসংখ্য সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে দলমত নির্বিশেষে এমপি আবু জহিরকে একে একে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। বক্তারা বর্ণনা দেন সংবর্ধিত ব্যক্তির মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন কাজের। তুলে ধরেন আরও বিভিন্ন দাবি। অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে এমপি আবু জাহির বলেন, কিছু পাওয়ার জন্য নয়; জনসেবাকে ইবাদত হিসেবে নিয়েছি। সেজন্য উন্নয়ন করি। নিজের জন্মস্থানে এমন আয়োজন আমাকে আপ্লুত করেছে। অনুপ্রেরণা পেয়েছি ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু করার। তিনি বলেন, মেডিক্যাল কলেজ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ যত উন্নয়ন হয়েছে এসবের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জনগণের। কারণ আপনারা ভোট না দিলে আমরা কাজের সুযোগ পেতাম না। আজকের এই ফুলেল ভালাবাসা আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি উৎস্বর্গ করতে চাই। এ সময় তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং এই প্রতিষ্ঠানে হবিগঞ্জে কি ধরণের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে এসব বিষয়ে আলোকপাত করেন।রিচি গ্রাম পঞ্চায়েতের সভাপতি আলহাজ্ব আছান উল্লা’র সভাপতিত্বে ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এবং রিচি যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক জিতু মিয়ার সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সংবর্ধনা আয়োজক কমিটির আহবায়ক কাজী কামাল উদ্দিন।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ বারো পঞ্চায়েত সভাপতি আলহাজ্ব রইছ মিয়া, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আরব আলী, রিচি গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বী আরব আলী, অ্যাডভোকেট মোঃ নুরুজ্জামান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মোতালিব, জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল মুকিত, গোপায়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আক্তার হোসেন, মুফতি আলমগীর হোসেন সাইফী, বরকত আলী, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির, সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান, আনোয়ার হোসেন সাজু, আব্দুর রহিম, আব্দুর রাজ্জাক, নুরুল আমিন শামসু, দিদার আলী, জাবেদ আলী, কাজল আহমেদ, আব্দর রউফ মাসুক, সাদিকুর রহমান মুকুল প্রমুখ।
পরে প্রধান অতিথি ও সংবর্ধিত ব্যক্তিত্ব এমপি আবু জাহিরকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন রিচি গ্রামের মুরুব্বীয়ান। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন রিচি সাগর কোনা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আহমেদ হোসেন বিপ্লব এবং গীতা পাঠ করেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক বাধন আচার্য্য। অনুষ্ঠানে এমপি আবু জাহিরকে রিচি গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়। এতে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।