খবর৭১ঃ নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে প্রথম দিন বসানো সম্ভব না হলেও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের দ্বিতীয় দিনের প্রচেষ্টায় পদ্মা সেতুতে বসানো হয়েছে ৩২তম স্প্যান। রবিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫নং পিয়ারে স্প্যানটি বসানোর কাজ শেষ হয়। এর মধ্যে দিয়ে দেশের দীর্ঘতম এই সেতুর ৪৮০০ মিটার দৃশ্যমান হলো।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি থাকলেও তীব্র স্রোতের কারণে স্প্যানবাহী ক্রেন পিয়ারের কাছে নোঙর করতে না পারায় পারায় বসানো যায়নি স্প্যানটি।
সেতু সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী সূত্র ও সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গতকাল শনিবার স্প্যানটি বসানোর পূর্বপ্রস্তুতি অনুযায়ী সকালে কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই এর মাধ্যমে পিয়ারের অনেক কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়। তবে নদীতে স্রোতের কারণে বিকাল পর্যন্ত চেষ্টা করেও শেষ অবদি বসানো যায়নি স্প্যানটি। পরে ক্রেনটিকে আরও কিছুটা দূরে নদীতে নোঙর করে রাখা হয়। রবিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পুনরায় স্প্যান বসানোর কাজ করা শুরু হয়। এরপর ক্রেনটিকে নির্ধারিত স্থানে এনে প্রকৌশলীদের মাপযোগ শেষে ধীরে ধীরে ইঞ্চিমেপে নির্ধারিত পিয়ারে ভূমিকম্প সহনশীল বিয়ারিংয়ের উপর স্প্যানটি বাসানো হয়। সকাল সাড়ে ছয়টায় থেকে শুরু হওয়া স্প্যানটি বসানোর পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে তিন ঘণ্টার মতো।
স্প্যানটি বাসানোর মাধ্যমে পুরো সেতুতে বাকি রইলো আর মাত্র ৯টি স্প্যান বসানোর কাজ। যেগুলো সবগুলোই মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১-২, ২-৩, ৩-৪, ৭-৮, ৮-৯, ৯-১০,১০-১১, ১১-১২, ১২-১৩ নং পিয়ারে বসানো হবে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে সবগুলো স্প্যানের এর মধ্যেই বসানোর কাজ শেষ হয়।
এর আগে চলতি বছরের ১০ জুন পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ বসানো হয়েছিল ৩১তম স্প্যান। করোনা আর বন্যা পরিস্থিতির কবলে সেতুর অন্যান্য কাজ চললেও এরপর আর কোনো স্প্যান বসানো হয়নি।
সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ ভাগেরও বেশি এবং মূল সেতুর প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
সেতুসংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, আরও তিনটি স্প্যান ‘ওয়ান-এ’, ‘ওয়ান-বি’, ‘ওয়ান-সি’ সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। পরবর্তী ৪টি স্প্যান পিয়ার ১-২, ২-৩, ৩-৪ নম্বর পিয়ারে বসানো হবে। আর ডিসেম্বরে ৩২তমসহ বাকি ১০টি স্প্যান পিয়ারের ওপর বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয় ৩১টি স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ৪ হাজার ৬৫০ মিটার অংশ।
৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সব কটি পিয়ার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে।