করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে ১ দশমিক ৬ শতাংশে : বিশ্বব্যাংক

0
590
করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে ১ দশমিক ৬ শতাংশে : বিশ্বব্যাংক

খবর৭১ঃ করোনার প্রভাবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, করোনার প্রভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে শিল্প উৎপাদন ও রপ্তানি খাত। সাধারণ মানুষের ভোগ ব্যয়ও কমে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয়ের উপর বেশি নির্ভর হওয়ায় প্রবৃদ্ধিতে এর প্রভাব পড়বে। আশঙ্কা করা হয়েছে, বাংলাদেশে কোভিডের কারণে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তায় বৈষম্য বাড়বে।

বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া ইকনোমিক ফোকাস প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মহামারীর অভিঘাত প্রলম্বিত হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া নজিরবিহীন অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আগের বিশ্বমন্দার চেয়ে এবারের প্রভাব আরো খারাপ হবে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ ভারতের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি না হয়ে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি সংকুচিত হয়ে যাবে।

করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা। লাখ লাখ মানুষকে এই মহামারী চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে পড়তে পারে, যেখানে গত পাঁচ বছর ধরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের উপরে ছিল।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশ সরকার ৮ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও বিশ্বব্যাংক বলছে, এই হার ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। তবে পরের বছর এই হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিষয়ে আরো বলা হয়েছে, লকডাউনের সময়কালে গত এপ্রিলে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনায় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমে যাওয়া এবং প্রবাসী আয় হ্রাসের ফলে ভোগ বা খরচ করার প্রবণতা কমেছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। করোনার কারণে দিনমজুরসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক ও উৎপাদন খাতের বেতনভুক্ত কর্মীদের জীবন-জীবিকার ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে। শহরের শ্রমিকেরাও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিশেষ করে করোনার সময়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৬৮ শতাংশ শ্রমিকের জীবিকার ওপর আঘাত এসেছে। করোনার সময়কালে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। তবে চাহিদা কমে আসায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে আসায় বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক শিল্পে আঘাত আসতে পারে। বিনিয়োগ কম হওয়ার প্রভাবও অর্থনীতিতে পড়বে। তবে আশার দিকও রয়েছে। করোর সময়েও ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক শিল্পের চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে। গত তিন মাসে বাংলাদেশের রেমিট্যান্সে বড় উলম্ফন দেখা যাচ্ছে।

বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে চাহিদা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ সামনে কমে আসতে পারে, সেই সঙ্গে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে কর্মীদের আয় কমে আসায় ভোগ ব্যয় বাড়ার সুযোগ থাকবে না।

প্রতিবেদন প্রকাশ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টিমবন উল্লেখ করেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির নিম্ন গতিধারা বাংলাদেশকেও আঘাত করবে। তবে বাংলাদেশের সরকার এই বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি সঠিক পথেই রয়েছে। করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আর্থিক খাত, স্বাস্থ্য খাতসহ দরিদ্র্যদের সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত পূর্বাভাসের চেয়ে এবারের প্রতিবেদনে আরো বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ ভারত। করোনার প্রভাবে ভারতের অর্থনীতি ৯ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া নেপাল ও পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৬ ও শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কার ৩ দশমিক ৩ ও ভুটানের ১ দশমিক ৮ শতাংশের পূর্বাভাস রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here