বিশ্বব্যাংকের টাকায় বিদেশ সফরের আয়োজন

0
398
করোনায় চাকরি হারিয়েছে শহরের ৬৬, গ্রামের ৪১ ভাগ কর্মীঃ বিশ্ব ব্যাংক

খবর৭১ঃ

বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘মিলেমিশে’ বিদেশ সফরের প্রস্তাব দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় পরিচালিত ‘রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক)’ দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনীতে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রকল্পের বাইরে আরও সংশ্লিষ্ট ৬টি সংস্থার প্রতিনিধি এই সফরে যাবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এগুলো হল- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, পরিকল্পনা কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। প্রকল্পটির আওতায় এর আগে বৈদেশিক সফর খাতে বরাদ্দ ছিল ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এখন তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে অতিরিক্ত আরও ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যেই বিদেশ সফরে খরচ হয়েছে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মঙ্গলবার বলেন, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে মিলেমিশেই বিদেশ সফরের আয়োজন। কেননা যার সরাসরি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত শুধু তাদেরই অভিজ্ঞতা নিতে বিদেশ যাওয়ার কথা। সেটির বাইরে যারা আছেন, তারা ফিরে এসে প্রকল্পে কী ধরনের মূল্য সংযোজন করেছেন বা করবেন সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। তারা ফিরে এসে প্রকল্পের কী উপকারে লাগবে এ বিষয়ে যদি সঠিক ব্যাখ্যা না থাকে তাহলে জল্পনা-কল্পনা ও প্রশ্নের সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা এই সফরে একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ থেকে শুরু করে অর্থ বরাদ্দ পর্যন্ত সব পক্ষের কর্মকর্তাদের যুক্ত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগামীকাল (আজ) বৈঠকে বসে তারপরই বিষয়টি দেখব। এখানে মিলেমিশে বিদেশ যাওয়ার বিষয় নয়। প্রস্তাবের বিষয়ে আমি এককভাবে তো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) দিলীপ কুমার বণিক জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অফিস প্রধান ছাড়া কেউ কথা বলতে পারবেন না। পরে অধিদফতরের মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা দিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।

পিইসি সভার জন্য তৈরি কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক শিক্ষা সফর বাবদ অনুমোদিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং প্রস্তাবিত তৃতীয় সংশোধিত প্রস্তাবে ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।

গত জুন মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ সফরে কারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং ভবিষ্যতে কারা অংশগ্রহণ করবেন তা সভাকে অবহিত করা হবে। এ ধরনের সফর আয়োজনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। অন্যথায় এ বাবদ প্রস্তাবিত অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দ ডিপিপি থেকে বাদ দেয়া হবে।

মিলেমিশে বিদেশ সফরের প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনা রয়েছে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ সফর করা যাবে না। আমরা সেই নির্দেশনার বাইরে যেতে পারব না। এখানে মিলেমিশে বিদেশ সফরের সুযোগ নেই। সত্যিই যদি প্রয়োজন থাকে তাহলে সেটি এক রকম কথা। আর যদি প্রয়োজন না থাকে সে বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন দেখবে।

সূত্র জানায়, রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন-দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৪০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় কিছুটা কমিয়ে করা হয় ১ হাজার ৮৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ১ হাজার ২৯০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এবার তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে ২২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৩১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

এটি বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৮ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে এক হাজার ২৫৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের সংস্থান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়াদও ছয় মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। সেটি না হওয়ায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর বাড়ানো হয় মেয়াদ। এতেও শেষ না হওয়ায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এতেও বাস্তবায়ন শেষ হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here