খবর৭১ঃ উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। এর মধ্যে নওগাঁয় ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। বগুড়ায় যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত, পানিতে ডুবে গেছে আঞ্চলিক মহাসড়ক। নাটোরের সিংড়ায় পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ, মত্স্য ও কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি। পানি ঢুকেছে শহরেও। ইত্তেফাক প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর।
নওগাঁ :বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। জেলার আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর পানি একটি পয়েন্টে কমলেও অন্য সবগুলো পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। আত্রাই ও মান্দা উপজেলার ১০ ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। নতুন নতুন বাড়িঘর এবং ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে শহররক্ষা প্রাচীরের আউটলেট
দিয়ে শহরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। সদর ও বদলগাছি উপজেলার ছোট যমুনা নদীর বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া শহররক্ষা প্রাচীরের আউটলেট দিয়ে শহরের উকিলপাড়া, পুরাতন কালেক্টরটে ভবন চত্বর, সুপারিপট্টি এবং বিজিবি ক্যাম্পে পানি ঢুকে পেড়েছে।
জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ জানান, এরই মধ্যে বন্যাদুর্গত পরিবারগুলোকে সরকারি সহায়তার আওতায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো বিতরণে কার্যক্রম চলছে।
আত্রাই (নওগাঁ) :আত্রাইয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। আত্রাই নদীর পানি বিপত্সীমার প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর সঙ্গে সঙ্গে বিলের পানিও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আহসানগঞ্জ, সমসপাড়া, কাশিয়াবাড়ি, চকশিমলা, বুড়িগঞ্জ হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫০০ কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাশিয়াবাড়ি স্লুইস গেটের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় আত্রাই-পতিসর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বগুড়া :যমুনা নদীর পানি বিপত্সীমার ১০ সেন্টিমিটার এবং বাঙ্গালী নদীর পানি ২১ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বাড়ার ফলে সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কাজলা, কামালপুর ও সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এবং এসব এলাকার রোপা আউশ, মাষকলাই, মরিচ, স্থানীয় জাতের গাঞ্জিয়া ধানসহ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। আবার পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) :গোবিন্দগঞ্জের করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবার বিকালে সাপমারা ইউনিয়নের চকরহিমাপুর নামক স্থানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। নদী তীরবর্তী ৩০টি গ্রামের কলা, আখ ও রোপা আমনসহ বিভিন্ন শাকসবজির খেত তলিয়ে গেছে। প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে উপজেলা পরিষদ চত্বরে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি প্রবেশ করায় কলার ভেলায় চড়ে স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। এদিকে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর ভায়া ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় ঝুঁঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
সিংড়া (নাটোর) :সিংড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পৌর এলাকার ১২টি ওয়ার্ডে বন্যার পানি প্রবেশ করে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি। উপজেলা পরিষদ, থানা, সাব রেজিস্ট্রার, ভূমি অফিস, সিংড়া বাজার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পোস্ট অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বন্যার পানি ঢুকেছে। বুধবার সকালে প্রবল স্রোতে সিংড়া-বলিয়াবাড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে যায়। শোলাকুড়া মহল্লায় মাদ্রাসা-সংলগ্ন এলাকায় রাস্তা ধসে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সবমিলিয়ে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পৌরসভার ৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। দ্বিতীয় দফা বন্যায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর রোপা আমন ও ৭ হেক্টর সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ভেসে গেছে ১ হাজার ৩০০ পুকুরের মাছ।
মেয়র মো. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, বন্যার কারণে পৌর এলাকার মানুষ পানিবন্দি। দিনরাত স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। বিভিন্ন স্থানে নিজ অর্থায়নে বালির বস্তা সরবরাহ করা হচ্ছে।