খবর৭১ঃ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ-লিয়াকত ও এসআই নন্দ দুলালদের সহযোগী আসামি পুলিশের অপর চার সদস্য স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এদিন বেলা ১১টার দিকে র্যাবের একটি দল তাদের কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে হাজির করেন।
এরপর দুজনকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. দেলোয়ার হোসেন ও অপর দুজনকে তামান্না ফারাহর আদালতের খাস কামরায় নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ শুরু হয়। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে জবানবন্দি শেষ হলে তাদের কক্সবাজার জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় তদন্ত সংস্থা র্যাব।
জবানবন্দি দেওয়া আসামিরা হলেন-পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের সিনিয়র এএসপি খাইরুল ইসলাম জানান, সিনহা হত্যা মামলার আসামি পুলিশের চার সদস্যকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২৪ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আদালতের আদেশ পেয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর পুলিশের চার সদস্যদের দ্বিতীয় দফা রিমান্ডের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে বুধবার চার দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে আনা হয়।
এর আগে উক্ত মামলায় বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দ দুলালকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের মধ্যে প্রদীপকে চার দফায় ১৫ দিন এবং লিয়াকত ও নন্দ দুলাল রক্ষিতকে তিন দফায় ১৪ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। লিয়াকত ও নন্দ দুলাল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও প্রদীপ রাজি হননি। তারা সবাই এখন কারাগারে রয়েছেন। এপিবিএন এর ৩ সদস্য এবং পুলিশের বাকি চার সদস্যসহ এ মামলায় ১২ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পেয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। তিনি মারিশবুনিয়ার একটি পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ফেরার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আসামি ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়। সিনহা হত্যার পর পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব। এছাড়া হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও তিন এপিবিএন সদস্যকে গ্রেফতার করে এলিট ফোর্সটি। এনিয়ে মোট ১৩ আসামি করাগারে রয়েছে।
অপর দিকে, একই ঘটনায় টেকনাফ থানায় দুইটি ও রামু থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। সাক্ষী অপহরণের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় পরে আরেকটি মামলা হয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫টি মামলা হয়েছে। যার চারটি তদন্ত করছে র্যাব-১৫।
সিনহা হত্যার ঘটনায় সেনা ও পুলিশ বাহিনীর মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ২ আগস্ট এ কমিটি গঠন করা হয় এবং কার্যক্রম শুরু করে ৩ আগস্ট। সাত কর্ম দিবস অর্থাৎ ১০ আগস্ট কমিটিকে প্রতিবেদন জমাদানের সময় বেঁধে দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর প্রথমবার কমিটির সময় বাড়ানো হয় ২৩ আগস্ট পর্যন্ত। পরে কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে আবারও সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করতে না পারায় কমিটির মেয়াদ সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২ সেপ্টেম্বর কমিটি কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করেন। এরপর কমিটি ১৩ সুপারিশসহ ৮০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরি করে। সাথে সংযুক্তি দেওয়া হচ্ছে ৫৮৬ পৃষ্ঠা। তা ৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদন দেওয়া হলেও এ ঘটনার মূল মামলা চলছে আদালতে।