খবর৭১ঃ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের জমি ক্রয়ের দ্বন্দ্বে তার ওপর হামলা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
জানা গেছে, গত ৪ মার্চ ইউএনও ওয়াহিদা খানম উপজেলার খোদাদপুর মৌজায় (জেএল নং-১০৬, খারিজি খতিয়ান নং-৩৫, দাগ নং সাবেক-১, হাল দাগ নং-১ ও ২) মোট ১ একর ৮০ শতক জমি যার মূল্য ২০ লক্ষ ৬০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে (দলিল নং-৭২৯) তার বাবা উমর শেখের নামে একটি দানপত্র দলিল সম্পাদন করে নিয়েছেন। দাতা দুই ভাই আব্দুল মমিন সিদ্দিকি ও ফারুক সিদ্দিকি। তাদের বাড়ি উপজেলার নুরজাহানপুর গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উল্লেখিত জমাজমির এসএ রেকর্ডীয় মালিক আজগর আলী, সাং-খোদাদাতপুর। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর মুসলিম বৃটিশ সোলজারের মাহজির পরিবারের মুসলিম সোলজারদের ঘোড়াঘাটে কয়েকশ একর জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে আফছারাবাদ কলনি, নুরজাহানপুর কলনী, হায়দারনগর, খোদাদাতপুর কলনী। ১৯৪৭ এর পরে ১৫ বিঘা করে জমি সোলজারদের মধ্যে লিজ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজগর আলী খোদাদাতপুর কলনীতে এ জমি পাওয়ার পর তার নামে পরবর্তী এসএ রেকর্ড সম্পন্ন হয়। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের পর আজগর আলীকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তী ১৯৭১ সালের পর একই প্লটসহ অপর একটি প্লটের ৩০ বিঘা জমি ঘোড়াঘাটের ব্রিগিডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মইদ সিদ্দিকি এলোটপ্রাপ্ত হন।
খোদাদাতপুর মৌজায় উল্লেখিত জমি ভোগ দখলে ছিলেন, মইদ সিদ্দিকির ভাতিজা আব্দুল মমিন সিদ্দিকি ও ফারুক সিদ্দিকি। এসব জমিজমার বৈধ কোন কাগজপত্র ছিল না। এ কারণে পালশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ময়নুল (মাস্টার) এর পরিচালিত উপজেলা যুবলীগের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম গংরা প্রতি বছর এ থেকে দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে মমিন ও ফারুককে চাষাবাদ করতে দিত।
একই জমি ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম এ উপজেলায় সে সময় কর্মরত সেটেলমেন্ট অফিসারের সার্ভেয়ার তোফায়েল আহমেদের মাধ্যমে জানতে পেরে ক্রয় করার প্রস্তাব দেন। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেন, ঘোড়াঘাট এসিল্যান্ড অফিসের হেড ক্লার্ক (বড় বাবু) তোফাজ্জল হোসেন। গত ৪ মার্চ তারিখে তিনি তার বাবার নামে দানপত্র রেজিস্ট্রি করে নেন এবং জমি দখল বুঝে নেন।
কিন্তু জমিটি বর্তমানেও ধান চাষ করেছে পূর্বের মালিক মমিন সিদ্দিকি ও ফারুক সিদ্দিকি। জমির উত্তর দিকে একটি বড় গর্ত ছিল। দুই মাস পূর্বে গর্তটি বড় বাবু তোফাজ্জল হোসেনের তত্ত্ববধানে মাটি ভরাট করা হয়েছে বলে জানান পার্শ্ববর্তী বাড়ির আব্দুস সালাম মিয়া। এরপর জাহাঙ্গীর গংরা ঐ জমিতে আর যেতে না পারায় একটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। জমিটি দাতা এবং গ্রহীতার মধ্যে রক্ত সম্পর্ক না থাকলেও কিভাবে দানপত্র দলিল সম্পাদন হলো তার সঠিক উত্তর দিতে পারেনি দলিল লেখক আব্দুল হালিম। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার ঘোড়াঘাট সাব রেজিস্ট্রার মন্সুর আলীর সাথে তার অফিসে কথা হলে তিনি দলিল রেজিস্ট্রি সত্যতা স্বীকার করেন এবং জানান এ ব্যাপার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ৭টি দলিলের সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করেছেন। সার্টিফাইড কপি আজ রাতের মধ্যে প্রস্তুত করা সম্পন্ন করা হবে।
ইউএনও ওয়াহিদা খানম এ জমি ছাড়াও চককাঁঠাল মৌজায় এসএম আশরাফুল ইসলাম বকুলের ৩৩ শতক জমি ক্রয় করার জন্য সার্ভেয়ার তোফায়েল আহম্মেদের মাধ্যমে আশরাফুল ইসলামকে ১ লক্ষ টাকা বায়না দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আশরাফুলের ছেলে আরিফুল ইসলাম জিমন।
জিমন জানায়, তাদের জমিটি ক্রয় করার জন্য ইউএনও যে ১ লক্ষ টাকা বায়না হিসেবে দিয়েছেন সে টাকা আবার মাধ্যমে ফেরত চাচ্ছেন। বিষয়টি সিআইডির পক্ষ থেকে গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর আরিফুল ইসলাম জিমনের নিকট থেকে ঘটনার সত্যতার ওপর একটি লিখিত কাগজ করে নিয়েছেন। এ জমিটির অবস্থান মৌজা চককাঁঠাল ১০৫ দাগে ৩৩ শতক।
জিমন জানায়, জমিটি নেওয়ার জন্য ইউএনও জমির মূল দলিল ও চলমান পর্চা নিয়ে জমিটি পরিদর্শন করে দেখেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ময়নুল মাস্টার তার বাহিনী জাহাঙ্গীর গংদের নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের জমি জবর-দখল করে নিয়ে মোটা অঙ্কে বিক্রি করে থাকেন।