খবর৭১ঃ রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতন, ধর্ষণ, গণকবর দেওয়া, গ্রাম ধ্বংস করা, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা জানিয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে মিয়ানমারের দুই সৈনিক। তারা জানান, রোহিঙ্গাদের দেখামাত্র গুলি করে হত্যার নির্দেশ ছিল তাদের উপর।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) স্বীকারোক্তি দেওয়ার সময় মিয়ানমারের দুজন সৈনিক একথা বলেন। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফরটিফাই রাইটস।
স্বীকারোক্তি দেওয়া দুই সৈনিক হলেন- মাইও উইন তুন (৩৩) এবং জাও নাইং তুন (৩০)।
মাইও উইন তুন সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বলেন, ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কমান্ডিং অফিসারের কাছ থেকে পরিষ্কার নির্দেশ ছিল, ‘আপনি যাকে সামনে দেখবেন তাকেই গুলি করবেন।’
এই সৈনিক আরো বলেন, ‘তিনি শুধু নির্দেশ পালন করেছিলেন। ৩০ জন রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যায় সারাসরি অংশ নিয়েছিলেন। পরে সেই সব রোহিঙ্গাদের সামরিক ঘাঁটির কাছে একটি গণকবরে দাফন করেছিলেন।’
স্বীকারোক্তিতে মাইও উইন তুন বলেন, ‘কর্নেল থান থাকি রোহিঙ্গাদের সমূলে হত্যার নির্দেশ দেন। এরপর আমরা নির্বিচারে সবাইকে গুলি করেছিলাম। মুসলিম পুরুষদের কপালে গুলি করে লাশগুলো লাথি দিয়ে গর্তে ফেলে দিয়েছিলাম।’
মিয়ানমারের অপর সৈনিক জাও নাইং তুন আদালতে বলেন, আরেকটি ব্যাটালিয়নে থেকে তিনি ও তার সহকর্মীরা একই রকম নির্দেশনা অনুসরণ করেছিলেন। তাদের বলা হয়েছিলো, ‘শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক যাদেরই পাবেন তাদের হত্যা করবেন।’
এই সৈনিক বলেন, ‘তার ব্যাটালিয়ন প্রায় ৮০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করে। এছাড়া মংদু টাউনশিপে ২০টি গ্রাম ধ্বংস করে। আর সার্জেন্ট পায়ে ফোয়ে অং এবং কিয়েত ইয়ু পিন তিনজন রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণ করেছে, যার সাক্ষী আমি নিজেই।’
তিনি সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ‘তারা নিরস্ত্র ১০ জনকে ধরেছিল। তারপর তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে হত্যা করা হয়। গ্রামের একটি গণকবরে তাদের দাফন করা হয়।’
রাখাইনে ভেঙে পড়া একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস
প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সামনে প্রকাশ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণহত্যার কথা স্বীকার করে সাক্ষ্য দিলেন মিয়ানমারের এই দুই সেনা।
সোমবার মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই দুই সৈনিককে হেগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এই দুজনের স্বীকারোক্তির ফলে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ মেলে। মিয়ানমার সেনার নির্যাতনের কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে এসব রোহিঙ্গারা।
মানবাধিকার সংস্থা ফরটিফাই রাইটসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘মিয়ানমারের বিচারের জন্য এই স্বীকারোক্তি একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। এই ব্যক্তিরা মিয়ানমারের প্রথম অপরাধী ও রাজসাক্ষী হতে পারে।’