খবর৭১ঃ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বাংলাদেশ বিষয়ক একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। নব নিযুক্ত এই কর্মকর্তার নাম সাবহানাজ রশীদ দিয়া। ফেসবুকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, দিয়া বাংলাভাষী। বাংলাদেশ বিষয়ক যেকোনো বিষয়ে তিনি দ্রুত সাড়া দেবেন এবং সমস্যার সমাধান করবেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সোমবার ফেসবুকের আঞ্চলিক সদর দপ্তর সিঙ্গাপুরের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সাবনাজ রশিদ দিয়াকে বাংলাদেশ বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
মন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে ফেসবুকের হেড অব সেফটি বিক্রম সেনগ, ফেসবুক পাবলিক পলিসি বিষয়ক পরিচালক অশ্বিনী রানা, ফেসবুকের নব নিযুক্ত বাংলাদেশ বিষয়ক কর্মকর্তা সাবহানাজ রশীদ দিয়া এবং ফেসবুক মোবাইল পার্টনার বিভাগের ইরাম ইকবাল আলোচনায় অংশ নেন।
মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফেসবুককে বাংলাদেশের আইন ও বিধিবিধান মেনে চলা ছাড়াও দেশ ও দেশের বাইরে থেকে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সম্মান বিঘ্নিতকর মিথ্যা ও গুজব বা অপপ্রচারমূলক উপাত্ত প্রচার ছাড়াও সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, পর্নোগ্রাফি ও বাংলাদেশের সামাজিক- সাংস্কৃতিক মূল্যবোধবিরোধী উপাত্ত প্রচার না করতে আহ্বান জানিয়েছেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সকল প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান মেনে চলা ফেসবুকের দায়িত্ব। রিসেলার নিয়োগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে কর প্রদানে প্রতিনিধি নিয়োগ এবং বাংলা ভাষার সঠিক অনুবাদ ও প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর মন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ, আমাদের সমাজ আমাদের নাগরিকদের ফেসবুকের নিরাপদ ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। মন্ত্রী বাংলাদেশের আইন, আবহমান বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং নিয়মনীতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে আইন আছে, সেই আইন মোতাবেক ফেসবুককে কনটেন্ট এবং অন্যান্য বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখার বিষয়ে মন্ত্রীকে আশ্বাস দেন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, কর ও ভ্যাট বিষয়ক আইন মেনে চলার আশ্বাসও দেন।
প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে নানা বিষয়ে আলোচনার মধ্যে নাগরিক সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যয়ের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। কনটেন্ট বিষয়ে বিদ্যমান যে কোনো সমস্যা দ্রুত সমাধানসহ বাংলাদেশের অংশ দেখাশোনার জন্য একজন বাংলাদেশি বাংলাভাষীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। মন্ত্রী এই পদক্ষেপ গ্রহণকে একটি ফলপ্রসূ উদ্যোগ বলে ফেসবুককে ধন্যবাদ জানান।
বৈঠকে মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশে নৈরাজ্য পর্নোগ্রাফি, সন্ত্রাস, গুজব রটানো,পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, অপপ্রচার ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ, বিদ্যমান বিভিন্ন বিষয়ে ফেসবুককে বাংলাদেশের নিয়ম-নীতি মেনে নিরাপদ ফেসবুক ব্যবহারের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। বৈঠকে জানানো হয়, ফেসবুক বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রতি মাসে অন্তত একটি করে বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের স্বচ্ছ কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করবে।
বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফা কামাল, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (ট্যাক্স পলিসি) আলমগীর হোসেন, ফার্স্ট সেক্রেটারি কাজী ফরিদ উদ্দিন এবং বিটিআরসির সিনিয়র সহকারি পরিচালক তৌসিফ শাহরিয়ার ও আমজাদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এবং ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারিতে স্পেনের বার্সেলোনায় ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসের সাইড লাইনে ফেসবুকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মন্ত্রীর বৈঠক হয়। এরপর মন্ত্রী ঢাকা ও দেশের বাইরে একাধিকবার ফেসবুকের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত ফেসবুক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন।