মিজানুর রহমান মিলন সৈয়দপুর প্রতিনিধি :
নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক সন্তানের জননীকে অপহরণ করতে এসে সাবেক স্বামীসহ তার বন্ধুদের গণপিটুনী দিয়েছে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় ওই গৃহবধুর মা গোলাপী বেগম ৬ জনকে আসামি করে গতকাল সোমবার সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে গতকাল সোমবার বিকেলে নীলফামারী জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। গত রবিবার গভীররাতে অপহরণ চেস্টার ওই ঘটনা ঘটেছে সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর চড়কপাড়া গ্রামের কান্দুরার মোড় এলাকায়।
মামলার বিবরণে জানা গেছে,প্রায় দুই বছর আগে ওই
গ্রামের আবুল হোসেনের মেয়ে আসমা বেগমের সাথে শহরের কুন্দল গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে লুৎফর রহমানের বিয়ে হয়। ওই দম্পতির একটি শিশু পুত্র রয়েছে। এরই মধ্যে রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার রহমতের বাজার এলাকার- (বর্তমান ঠিকানা-জিমি অটো গ্যারেজ,আলমনগর,পীরপুর, রংপুর) নুরুল ইসলামের পুত্র মো. মেরাজ আসমা বেগমের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে।
গত এক বছর আগে মেরাজ আসমাকে দিয়ে তার স্বামী লুৎফর রহমানকে তালাক দিতে বাধ্য করায়। তারপর সে রংপুরে আসমাকে নিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই প্রেমিক স্বামী মেরাজ প্রায় দিনই নেশা করে কারণে অকারণ মানসিক ও শারিরিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। পরবর্তিতে আসমা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ২০ জুলাই কৌশলে মেরাজের বাড়ি থেকে তার পিত্রালয়ে চলে আসে। পরে আসামি মেরাজকে (সাবেক স্বামী) তালাক দেয়। তালাকের বিষয়টি জানতে পেরে সাবেক স্বামী মেরাজ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
এ অবস্থায় সে আসমাকে অপহরণ করার পরিকল্পনা আঁটে। পরিকল্পনা মতে গত রবিবার গভীররাতে বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর চড়কপাড়া গ্রামের কান্দুরার মোড় এলাকায় আসমার বাবার বাড়ির গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে মেরাজসহ তার সহযোগি পাঁচ বন্ধু। বিষয়টি টের পেয়ে বাড়ির লোকজন ঘরের ভিতর থেকে বের হওয়া মাত্রই তারা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে তারা আসমাকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। এসময় তাদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক হলে আশে পাশের লোকজন জড়ো হলে তারা চলে যায়। পরে গতকাল সোমবার ভোরে আবারও সংঘবদ্ধ ৬ জন ওই বাড়িতে প্রবেশ করে। এসময় তারা অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসমাকে অপহরন করে নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করলে তার চিৎকারে বাড়িসহ আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে অপহরনকারীরা পালিয়ে যাওয়ার চেস্টা করে। সাথে সাথে লোকজন ধাওয়া করলে লক্ষণপুর চড়ক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এলাকাবাসী তাদের আটক করে।
এসময় বিক্ষুব্ধ লোকজন তাদের গণপিটুনি দেয়। পরে তাদের পুলিশে দেয়া হয়। পুলিশের হাতে আটককৃতরা হলো -সাবেক স্বামী মেরাজ (২০), রংপুর নগরীর রবার্টসনগঞ্জের মন্ডলপাড়ার সবুর মিয়ার পুত্র গুড় ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম আরিফ (২০),রংপুর নগরীর ঘোড়াপীর মাজার এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকের পুত্র সাকিব (১৯),একই এলাকার মো.মিন্টুর পুত্র মো. মিম (১৯), স্বপন (১৯),ও আলমনগর খামারপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের পুত্র রাজা (১৯)। এ ঘটনায় গোলাপী বেগম আসমার সাবেক স্বামী মেরাজসহ আটককৃতদের বিরুদ্ধে সৈয়দপুর থানায় মামলা করেছেন। সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, আসামীদের আদালতের মাধ্যমে নীলফামারী জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলার ভিকটিম আসমাকে আদালতে হাজির করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। সৈয়দপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।