খবর৭১ঃ
মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনার মদনে এতিমদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা সুপরিকল্পিতভাবে উত্তোলন করে সরকারি নির্দেশনা না মেনে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কমিঠির লোকজন লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা সমাজসেবা অফসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯/২০ অর্থ বছরে চলতি জানুয়ারী- জুন মাস পর্যন্ত ৬ এতিমখানা মাদ্রাসায় ১৮৫জন এতিমের নামে ২৩লাখ ৬০হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দকৃত টাকা এতিমখানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর যৌথ স্বাক্ষরে উত্তোলন করা হয়েছে। ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বাবদ প্রত্যেক এতিম মাথা পিছু মাসিক বরাদ্দকৃত ২হাজার টাকা হতে খাদ্য বাবদ ১৬০০টাকা, পোষাক বাবদ ২০০টাকা, ঔষধ ও অন্যান্য বাবদ ২০০টাকা ব্যয় করার শর্ত রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সরকারি কোন নিয়ম নীতি মানছেন না শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।
এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সরজমিনে উপজলোর বরাটি- মোয়াটি- আকাশ্রী হাজী ওয়াহেদ আলী এতিমখানা দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা, তালুকখানাই কামরুন্নেছা এতিমখানা, আলমশ্রী দারুসুন্নাহ কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানা, পাছআলমশ্রী এতিমখানা মাদ্রাসা ও বাঁশরী মমতাজ উদ্দিন এতিমখানায় পরিদর্শন কালে এতিমের সংখ্যা তুলনামূলক কম পাওয়া যায়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কাগজে কলমে এতিম দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা ব্যয় করছে সংশ্লিষ্টরা।
এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, বাঁশরী মমতাজ উদ্দিন, পাছআলমশ্রী, আলমশ্রী দারুসুন্নাহ কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানা, তালুকখানাই কামরুন্নেছা এতিমখানা মাদ্রাসার এতিমরা গ্রামের লোকজনের বাড়িতে লজিং থাকে। এতিমদের খাবারের বরাদ্দকৃত টাকা শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ভাগাভাগি করে খায়। সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী যেসব শর্তে বরাদ্দ আসে তার ছিটেফোঁটাও নেই বেশির ভাগ এতিমখানায়। তারপরও বিভিন্ন তদবিরে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এতিমখানাগুলোতে। এতিমদের টাকা যাতে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয় সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ঠ কর্তিপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর কিছু প্রতিষ্ঠান ভুয়া এতিমের তালিকা দেখিয়ে বিভিন্ন এতিমখানার ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা এতিমের বরাদ্দেরর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ফলে প্রকৃত এতিমরা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তালুকখানাই কামরুন্নেছা এতিমখানা মাদ্রাসার সভাপতি রফিকুজ্জামান জানান, আমাদের এতিমখানায় ২০/২২ জন এতিম আছে সবাইকে আমরা বরণপোষণ করি। আমার ও প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন করি। অথচ এ মাদ্রাসায় ৩৩এতিমের নামে বরাদ্দ এসেছে।
বিনুনা হাসান এতমিখানা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সুয়েল মান্নান সুবিধাভোগী এতিমদের তালিকি সম্পর্কে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। অথচ উক্ত মাদ্রাসা থেকে ২৭জন এতিম সুবিধা পাচ্ছ।সরজমিনে ৫ জন এতিম উপস্থিত পাওয়া যায়। বরাটি -মোয়াটি- আকাশ্রী হাজী ওয়াহদে আলী এতিমখানা দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক আব্দুসাত্তার জানান, আমরা ৭০ জন এতিমের ৮লাখ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করে গত ৬ মাসে ব্যয় করেছি। বাঁশরী মমতাজ উদ্দিন এতিমখানা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার ছেলে সেলিম আহমেদ জানান, আমার প্রতিষ্ঠানের ১৭জন বরাদ্দ পেয়েছে। এ টাকা উত্তোলন করতে ট্রেজারিসহ বিভিন্ন অফিসে উৎকুচ দিতে হয়। এই টাকা থেকে শিক্ষকদের বেতন দেই। আমার হাত থেকেও অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। ফলে যথানিয়মে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা শাহ জামান উদ্দিন আহমেদ জানান, এ অর্থের বরাদ্দের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমি নতুন যোগদান করেছি। তবে এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সরজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এতিমদের টাকা আত্মসাৎ এর ব্যাপারে অভিযোগ পেলে কোন ছাড় নেই। জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক আলাল উদ্দিন জানান,অভিযোগ পেলে আমি নিজেই পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেব।