খবর৭১ঃ ক্লাবপাড়ার বহুল আলোচিত ক্যাসিনোর পর এবার ‘ভারতের শিলং তির’ নামক অনলাইন জুয়া হানা দিয়েছে রাজধানীতে। বেশ কয়েক মাস ধরে অনলাইনের এই জুয়া শুরু হলেও সম্প্রতি এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেফতারকৃতদের নাম শামিম মিয়া, আব্দুল আলী, এরশাদ মিয়া ও সোহাগ মিয়া। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে ছয়টি মোবাইল, একটি রেজিস্টার খাতা, ১-৯৯ পর্যন্ত নম্বরবিশিষ্ট চারটি চার্ট সংবলিত ব্যবহূত জুয়ার শিট এবং পাঁচটি অব্যবহূত চার্ট সংবলিত শিট। এ ঘটনায় গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে গোয়েন্দা অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের উপ-কমিশনার মীর মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের শিলং ও গৌহাটি এলাকয় ১৯৯০ সালের দিকে চালু হয় এই জুয়া খেলা। পর্যায়ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে সিলেটের বিভিন্ন জনপদে। এরপর এটির বিস্তার ঘটে নেত্রকোনায়। জানা গেছে, এই জুয়া খেলে সিলেট ও নেত্রকোনার কয়েক শ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে। সম্প্রতি এটির বিস্তার ঘটেছে রাজধানীতে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে সম্প্রতি রাজধানীর কালাচাঁদপুর এলাকা থেকে ‘অনলাইনে শিলং তির জুয়া’র এজেন্ট শামিম ও আব্দুল আলীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার বড়ুয়াপনা বাজার থেকে তাদের সহযোগী (এজেন্ট) এরশাদ ও সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়।
গোয়েন্দা অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের উপ-কমিশনার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, ভারতের শিলংয়ের জুয়াড়িরা বাংলাদেশে এজেন্ট নিয়োগ দেয়। বাংলাদেশি এজেন্টরা আবার বিভিন্ন এলাকায় তাদের সেলসম্যান নিয়োগ করে। এই সেলসম্যানদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের লোভ দেখিয়ে ‘শিলং তির’ নামক অনলাইন জুয়ায় আসক্ত করে তাদের সর্বস্বান্ত করা হয়। ভারতের শিলংভিত্তিক ওয়েবসাইটে ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত নম্বরগুলো বিক্রি করা হয়। ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত নম্বরগুলো যারা ক্রয় করে, তাদের সঙ্গে সেলসম্যানরা যোগাযোগ করে। তখন জুয়াড়িরা সেলসম্যানের কাছে নম্বর ও বিভিন্ন অঙ্কের টাকা প্রদান করে।
সেলসম্যানরা বিক্রীত এই নম্বরের বিপরীতে টাকা এজেন্টের কাছে দেয়। ভারতের শিলংয়ে রবিবার ছাড়া সপ্তাহের ছয় দিন বাংলাদেশ সময় বিকাল সোয়া ৪টার দিকে এই জুয়া খেলার ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ড্রতে ১ থেকে ৯৯-এর মধ্যে একটি নম্বর বিজয়ী হয়। যারা ঐ নম্বর ক্রয় করে, তারা বিজয়ী হিসেবে গণ্য হয় এবং বিজয়ীরা নম্বরের ক্রয়মূল্যের ৮০ গুণ টাকা এজেন্টের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ জুয়াড়ি বিজয়ী হতে না পেরে তাদের পুঁজি হারিয়ে ফেলে। জুয়াড়ি, সেলসম্যান ও এজেন্টের মধ্যে সমস্ত লেনদেন সম্পন্ন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
মীর মোদাচ্ছের হোসেন জানান, টিনএজার থেকে শুরু করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের অনেকেই এই জুয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের ছয় দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আদালত রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে।