খবর৭১ঃ বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি লাগামহীন হয়ে যেতে পারে বলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে । বাংলাদেশের কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে অস্ট্রেলিয়ার পুরস্কারপ্রাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ান বিষয়ক লেখিকা সোফি কাজিন্স তার প্রতিবেদনে বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে অবস্থা এখনও আসেনি।
ল্যানসেটের প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, একদিকে বর্ষা। অন্যদিকে ডেঙ্গু। এর মধ্যে আবার করোনা। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশজুড়ে লাগামহীনভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ল্যানসেটের প্রতিবেদনে করোনা পরীক্ষার জন্য সরকার যে ফি নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদনে তার সমালোচনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফি নির্ধারণের পর পরীক্ষার হার কমে প্রতিদিন ১ হাজার মানুষে ০.৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আগস্টে প্রতি এক হাজার মানুষে ০.৬ হারে টেস্ট হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমিনেন্সের প্রধান শামীম তালুকদার দ্য ল্যানসেটকে বলেন, এই মহামারি বাংলাদেশের ‘অনৈতিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে’ উন্মোচিত করেছে।
তালুকদার দাবি করেন, শুরুতে বেসরকারি খাতকে টেস্ট করতে দেওয়া হয়নি। এখন আবার ফি নেওয়া হচ্ছে। এতে গরীব মানুষরা বাদ পড়ছেন।
ঢাকার কয়েকটি কবরস্থান ঘুরে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তালুকদার। কবরস্থান পরিচালনাকারীরা তাকে বলেছেন, সরকারি হিসাবের চেয়ে দেশে চারগুণ বেশি মৃত্যু হচ্ছে। অনেকে উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন, কিন্তু করোনা পরীক্ষা হয়নি।
বাংলাদেশের আইইডিসিআর-এর সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমানও টেস্টের জন্য ফি নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, , মহামারির সময়ে মানুষের কাজ নেই। টাকা নেই। এমন অবস্থায় সরকারের টাকা নেওয়া উচিত হচ্ছে না।
করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার জন্য জুলাই মাসে বাংলাদেশের একজন হাসপাতাল মালিককে গ্রেফতার করা হয়। যা দেশটির ভঙ্গুর বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতকে সামনে তুলে আনে। আইইডিসিআর-এর সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান মনে করেন এমন জালিয়াতি বন্ধে সরকারে জরুরিভাবে নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করা উচিৎ যাতে মানুষের মধ্যে করোনার পরীক্ষা নিয়ে বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
‘ঢাকার আরেকজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ল্যানসেটকে বলেন, সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টেস্ট হচ্ছে, এটি আসলে কিছুই না।’
ওই চিকিৎসক শঙ্কা প্রকাশ করে আরো বলেন, এই মহামারি আরো অনেক দিন থাকবে। আমি ভয় পাচ্ছি শীত আসলে কী হবে। মানুষও ভয় পাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনও কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
আন্তর্জাতিক জরিপকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৯৪ জন। মারা গেছেন ৪ হাজার ১৭৪ জন।