করোনায় বাংলাদেশে চাকরি হারিয়েছে ১৭ লাখ তরুণ

0
391
করোনায় বাংলাদেশে চাকরি হারিয়েছে ১৭ লাখ তরুণ

খবর৭১ঃ বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর প্রভাব কর্মসংস্থানের ওপর সরাসরি পড়েছে। চাকরি হারানোর পাশাপাশি আয়ও কমেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগোষ্ঠীর। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। করোনার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে তরুণ (১৫-২৪ বছর) জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ওপর। বাংলাদেশের প্রায় ১৭ লাখ তরুণ এ সময় চাকরি হারিয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক যৌথ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘ট্যাকলিং দ্য কোভিড-১৯ ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট ক্রাইসিস ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার রাতে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে করোনায় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৩টি দেশের তরুণদের চাকরি হারানোর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, করোনা ও লকডাউনের কারণে বাংলাদেশে স্বল্প মেয়াদে চাকরি হারিয়েছেন ১১ লাখ ১৭ হাজার তরুণ। দীর্ঘ মেয়াদে তা বেড়ে ১৭ লাখ ৭৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। তবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে করোনায় সবচেয়ে বেশি চাকরি হারিয়েছে ভারতের তরুণ জনগোষ্ঠী। দেশটির ৬১ লাখ ১৩ হাজার তরুণ চাকরি হারিয়েছেন বা এ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন।

দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানে করোনায় চাকরি হারিয়েছেন ২২ লাখ ৫৮ হাজার তরুণ। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় এ সংখ্যা ১৮ লাখ ৮১ হাজার, ফিলিপাইনে ১০ লাখ ১৯ হাজার, থাইল্যান্ডে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ও ভিয়েতনামে ৫ লাখ ৪৮ হাজার। এর বাইরে কম্বোডিয়ায় ২ লাখ ৫৫ হাজার, নেপালে ১ লাখ ৮৬ হাজার ও শ্রীলংকায় ১ লাখ ৫১ হাজার তরুণ চাকরি হারিয়েছেন বা এ প্রক্রিয়ায় আছেন।

তরুণদের চাকরি হারানোর সাতটি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এগুলো হল- কৃষি, খুচরা বাণিজ্য, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, অভ্যন্তরীণ পরিবহন সেবা, নির্মাণ খাত, টেক্সটাইল খাত ও অন্যান্য সেবা খাত। বাংলাদেশের তরুণরা এ সাত খাতে চাকরি হারিয়েছেন যথাক্রমে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ, ১২ দশমিক এক শতাংশ, দুই দশমিক ছয় শতাংশ, সাত দশমিক চার শতাংশ, ১২ দশমিক আট শতাংশ, ১৩ দশমিক ছয় শতাংশ ও চার দশমিক পাঁচ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, করোনার কারণে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব দ্রুত বাড়ছে। চলতি বছর শেষে ১৩টি দেশে এ হারে বড় ধরনের উল­ম্ফন হতে পারে। কোনো কোনো দেশে ২০১৯ সালের তুলনায় এ হার দ্বিগুণ আকার ধারণ করবে। এর মধ্যে করোনায় বাংলাদেশে তরুণদের বেকারত্বের হার দ্বিগুণেরও বেশি বাড়বে।

এক্ষেত্রে ২০১৯ সালে দেশে তরুণ জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার ছিল ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি বছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ২৪ দশমিক আট শতাংশ। প্রতিবেশী ভারতে ২০১৯ সালে তরুণ জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার ছিল ২৩ দশমিক তিন শতাংশ। চলতি বছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩২ দশমিক পাঁচ শতাংশ। আর পাকিস্তানে ২০১৯ সালে দেশে তরুণ জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার ছিল আট দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি বছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ২১ দশমিক পাঁচ শতাংশ। এছাড়া শ্রীলংকায় ২০১৯ সালে দেশে তরুণ জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার ছিল ২১ দশমিক এক শতাংশ। চলতি বছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৭ দশমিক আট শতাংশ।

প্রতিবেদনে তরুণের মধ্যে এ বেকারত্ব নিয়ন্ত্রণে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করেছে আইএলও ও এডিবি। এর মধ্যে রয়েছে সরকারিভাবে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, বেসরকারি খাতে শ্রমিক নিয়োগে ভর্তুকি প্রদানে সমন্বিত নীতি প্রণয়ন এবং তরুণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে তরুণদের কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো গেলে করোনার আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া এবং এ অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন সহজ হবে বলে মনে করছে আইএলও ও এডিবি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here