খবর৭১ঃ আফ্রিকা মহাদেশের মালিতে এক বেলার সেনা বিদ্রোহে সরকারের পতন হয়েছে। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে আটক করা হয়। আটকের পর প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে বিদ্রোহী সেনারা একটি বেসামরিক সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে।
সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটির স্বর্ণখনি কোম্পানির শেয়ারে দরপতন হয়েছে। বিশ্বনেতৃবৃন্দ সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই ঘটনা পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে বলেও নেতৃবৃন্দ সতর্ক করে দিয়েছেন। মালির সঙ্গে অন্যান্য দেশের সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহ সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
মালির কাটি সামরিক ঘাটির ডেপুটি কমান্ডার কর্নেল মারিক ডিয়াউ এবং জেনারেল সাদিও কামারা এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার সকালে আকস্মিকভাবেই কাটির সেনা ছাউনিতে বিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহীরা হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। তারা প্রথমে সেনা ছাউনির কর্মকর্তাদের আটক করে। এরপর ছাউনির বাইরে এসে একের পর এক কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। সেনারা কাটি থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রাজধানী বামাকোর দিকে এগুতে থাকে। তারা যতোই এগিয়ে গেছে, ততোই তাদের সঙ্গে সেনারা যোগ দিয়েছে। সাধারণ মানুষও তাদেরকে সমর্থন দিয়েছে।
বিদ্রোহী সৈনিকরা রাজধানীতে চলে আসে। যেখানে প্রেসিডেন্ট কেইটার পদত্যাগের দাবিতে জমায়েত হওয়া লোকজন তাদের স্বাগত জানায়। মঙ্গলবার দুপুরের পর তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে থাকা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম কেইটা (৭৫) ও প্রধানমন্ত্রী বউবউ কিসেকেকে আটক করে। প্রেসিডেন্টের ছেলে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীকেও আটক করা হয়েছে বলে জানা যায়। বিদ্রোহে দেশটির কত সৈনিক অংশ নিয়েছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, তিনি রক্তপাত চাননি। এজন্য তিনি বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী সেনারা উল্লাস প্রকাশ করে। তাদের সঙ্গে সরকারবিরোধীরাও যোগ দেয়। তারা মালির জাতীয় পতাকা নিয়ে আনন্দ করে। মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন দোকানে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। তবে গতকাল পরিস্থিতি শান্ত ছিল।
কেন এই বিদ্রোহ?
সেনাঅভ্যুত্থানের ফলে চরম অচলাবস্থা তৈরি হলো মালিতে। এমনকি বিদ্রোহী সেনারা কীভাবে সরকার গঠন করবে এবং কাকে প্রধান করা হবে গতকাল পর্যন্ত তারা সেই বিষয়ে কিছু স্পষ্ট করেনি। সেনারা কেবল জানিয়েছে, নতুন নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বেসামরিক সরকার গঠন করতে চায় তারা। যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেওয়া হবে। নিজেদের ন্যাশনাল কমিটি ফর স্যালভেশন অব দ্য পিউপিল বলে পরিচয় দিয়েছে বিদ্রোহী সেনারা। কমিটির মুখপাত্র কর্নেল ইসমায়েল ওয়াগ বলেন, আমরা ক্ষমতায় থাকতে আসিনি। দেশটিকে অরাজকতা থেকে মুক্তি দিতে এসেছি। তিনি রাজনীতিক এবং সুশীল সমাজের সবাইকে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো বিজয়ী হন কেইটা। কিন্তু দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় তার ওপর অনেকের ক্ষোভ তৈরি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে বেশ কয়েকবার বড় ধরণের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভে গত মাসে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। দেশটির রক্ষণশীল মুসলমান ইমাম মাহমুদ ডিকো নেতৃত্বাধীন নতুন একটি জোট দেশে সংস্কারের দাবি তুলেছে। তাকে কেইটা যৌথ সরকার গঠন করাসহ নানা প্রস্তাব দিলেও তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। মূলত এমফাইভ আরএসপি বিদ্রোহীরা এর আগেও সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চালিয়েছে। কয়েক মাস আগে যে প্রক্রিয়ায় মালিতে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে তা নিয়েও মানুষের মধ্যে তুমুল ক্ষোভ ছিল। অনেকেই বলেছেন, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। বেতন ও ভাতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষ ছিল মালির সরকারি বাহিনীর মধ্যে।
বিশ্বের কড়া প্রতিক্রিয়া
মালিতে সেনাবাহিনীর এই অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন। গতকাল বুধবারই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মালির পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে বসার কথা। মালির ঘটনায় বিস্মিত গোটা বিশ্ব। মঙ্গলবারই ঘটনার নিন্দা করেছে বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন এবং দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, পুরো অঞ্চলকে এই অভ্যুত্থান অস্থিতিশীল করবে। আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারপার্সন মওসা ফাকি মাহামাত নিন্দা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত মুক্তি দাবি করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্টও বিদ্রোহীদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। গোটা ঘটনার নিন্দা করে মালিতে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার আবেদন জানান তিনি। ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস ঘটনার নিন্দা করেছে এবং মালিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মালির সঙ্গে অন্যান্য দেশের সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে। মালিকে কোনো রকম সাহায্য করা হবে না বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এতে বিদ্রোহীরা দমবে বলে মনে করা হচ্ছে না। মালির ঔপনিবেশিক সাবেক শাসক ফ্রান্স প্রেসিডেন্টকে আটকের নিন্দা জানিয়েছে। সৈনিকদের ব্যারাকে ফিরে যেতে আহবান জানিয়েছে ফ্রান্স