খবর৭১ঃ কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত চার পুলিশকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব। এ সময় তারা গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য চার পুলিশ সদস্যকে দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে র্যাব।
সোমবার সন্ধ্যায় র্যাব সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন এলিট ফোর্সটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় তার বোনের করা মামলায় চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ (চার দিন) করা হয়েছে। এসময় তারা গুরুত্বপূর্ণ এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এই চারজনকে দশ দিনের রিমান্ডে নেয়ার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করেছেন। এবিষয়ে বুধবার শুনানি শেষে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।’
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আদালত সাত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দশ দিনের মধ্যে সকল কার্যক্রম জানাতে বলেছিল। তদন্ত কর্মকর্তা এরই আলোকে কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু এই সময় উন্মুক্ত করার জন্য আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেছে। অর্থাৎ আদালতের বেধে দেয়া সময়সীমা উন্মুক্ত হলো।’
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে সিনহার বোনের করা মামলার অন্যতম সাক্ষী সিফাত আজ জামিনে মুক্ত হয়েছেন। এছাড়া গতকাল শিপ্রা জামিনে মুক্ত হন। এর আগে সিফাত-শিপ্রার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে পুলিশ। এরমধ্যে দুটি টেকনাফ থানায় অন্যটি রামু থানায়।
এদিকে তাদের বিরুদ্ধে যে তিনটি মামলা হয়েছে সেগুলো তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে র্য্যাব। অর্থাৎ, সিনহা নিহতের ঘটনায় যে চারটি মামলা হয়েছে সবগুলোর দায়িত্ব পেল এলিট ফোর্সটি।
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব গণমানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে সেই হিসেবে এই মামলাটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত হয়ে তদন্ত করবে। মামলার অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করা। পাশাপাশি কী কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে র্যাব কাজ করছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবার র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘মূলত যে চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে প্রত্যেকে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার বিস্তারিত খুঁটিনাটি বিষয়ে এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানিয়েছে।’
তিনি বলেন, টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার সাহা, ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও এসআই নন্দ লাল রক্ষিত এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সিফাত এবং শিপ্রা দুজনকে তদনতকারী কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। তদন্ত কর্মকর্তা যেহেতু মনে করছেন- তদন্তের শুরুতে সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তাই মূল অভিযুক্তদের পর্যায়ক্রমে পরবর্তী সময়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘সিফাত ও শিপ্রার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে এরমধ্যে একটি মাদক মামলা। অন্য দুটির মধ্যে রয়েছে- সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশ বাদী মামলা। এই তিনটা মামলা র্যাব তদন্ত করছে। এরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে। সেই মামলার আলামত ও সাক্ষীসহ সবকিছু র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা বুঝে নেবেন।’
খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ ও ক্যামেরার কোনো তথ্য নেই সে বিষয়ে র্যাব কী করবে জানতে চাইলে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি এসব জিনিস আলামত হিসেবে দেখানো হয়নি। তবে এই ঘটনায় দুজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তারপরই পুলিশের যারা সিজারলিস্ট যারা করেছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
তদন্ত কর্মকর্তাকে অন্য অফিসাররা সাহায্য করবেন কি না জানতে চাইলে র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘সার্বিক নির্দেশনায় অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করছে। কারণ তদন্ত কর্মকর্তা যে কারও সহযোগিতা নিতে পারেন। এ ব্যাপারে তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।’
শিপ্রা দেবনাথকে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিপ্রা একটি স্পর্শকাতর কথা বলেছেন। তা হলো- এটা তার জীবনের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। জীবনের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও তিনি বিচার দেখে যেতে চান। প্রয়োজনে ন্যায়বিচারের স্বার্থে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।’
‘এই ঘটনার পর তারা মানুষিকভাবে বিপর্যস্ত। এই কারণে তাদেরকে বিশদভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুতই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপরই তিন অভিযুক্তের রিমান্ডের ক্ষণগননা শুরু হবে। কারণ একটি ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সাক্ষী। তেমনি মেজর সিনহা নিহতের ঘটনায় সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ অন্যতম সাক্ষী।