খবর৭১ঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে যারাই দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। এ সময় মেজর সিনহার এই অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যার ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি যে সুপারিশ করবে, সরকার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুইজন ছাড়া বাকি ৭ জন কোর্টে হাজির হয়েছেন। আত্মসমর্পণ করার পরে আদালত কি নির্দেশনা দিয়েছেন সেই অফিসিয়াল নির্দেশনা এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। পৌঁছানোর পরে আমরা বলতে পারবো কি নির্দেশনা দিয়েছেন। যেহেতু মামলা হয়েছে আদালত এটা সম্পন্ন করবেন।
পুলিশের দায়ের করা মামলায় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের সঙ্গে থাকা লোকজন, যাদের কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে তাদের ভবিষ্যৎ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়টিও আমাদের নজরে রয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশে এদের বিষয়টিও আশা করছি থাকবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেখে এদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অনুমতি ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালানো যাবে না- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অভিযান বন্ধ নেই। অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও একটি নির্দেশনা রয়েছে। যেখানে অভিযান প্রয়োজন হবে, অবশ্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। সিনহার গাড়িতে থাকা তার সঙ্গী সিফাতের ভাষ্যমতে, সিনহাকে কোনোরূপ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই চেকপোস্টে গাড়ি থেকে নামতে বলে চার রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে হত্যা করেন পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই লিয়াকত আলী। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। তদন্তের স্বার্থে গত রবিবার টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ সবাইকে প্রত্যাহার করা হয়। আর হত্যা মামলা হওয়ার পর বুধবার ওসি প্রদীপকেও প্রত্যাহার করা হয়।
অবসর প্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যার বিচার চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। মামলাটির শুনানিতে সন্তুষ্ট হয়ে তা ‘ট্রিট ফর এফআইআর’ হিসেবে আমলে নিতে টেকনাফ থানাকে আদেশ দেন আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ। একইভাবে মামলাটি কক্সবাজার র্যাব-১৫-কে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মামলা অগ্রগতির প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ থানায় মামলাটি (নম্বর সিআর : ৯৪/২০২০ইং/টেকনাফ) তালিকাভুক্ত করা হয়। দণ্ডবিধির ৩০২, ২০১ ও ৩৪ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি তালিকাভুক্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার হত্যা মামলার প্রধান আসামি টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত। এ ছাড়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।