শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোলঃ যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দু’পাশের জরাজীর্ণ গাছ অপসারণ করে এশিয়ান হাইওয়ে করিডোর আর্ন্তজাতিকমানের প্রসস্তকরণসহ ৫ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন। সোমবার বেলা ১২ টার সময় বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন ভবনের মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক উন্নয়নের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টার প্রাইজ কর্তৃক ৩০ ফুট চওড়া রাস্তার স্থলে দু’পাশে ৩ ফুট করে বাদ রেখে ২৪ ফুট রাস্তা কার্পেটিং করায় প্রতিবাদ জানান সিএন্ডএফ এজেন্ট নেতৃবৃন্দ।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ সভাপতি ও শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ নুরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ¦ মফিজুর রহমান স্বজন।
সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবির বিষয়বস্তু হলো- যশোর -বেনাপোল মহাসড়কের পুরাতন জরাজীর্ণ অকার্যকর গাছ অপসারণ করে এশিয়ান হাইওয়ে করিডোর আর্ন্তজাতিকমানের প্রসস্তকরণ এবং ৬ লেনে উত্তীর্ণ করতে হবে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ সঠিক মাপ অনুযায়ি বাস্তবায়ন না করে উভয় পাশর্^ হতে ৩ ফুট করে ৬ ফুট বাদ রেখে ২৪ ফুট করা হচ্ছে, সঠিক মাপ ৩০ ফুটের স্থলে ৩০ ফুটই করার জন্য প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। আমড়াখালী হতে বেনাপোল স্থরবন্দর পর্যন্ত বাইপাস এর অসমাপ্ত সংযোগ সড়ক বাস্তবায়নের দাবি জানান হয়েছে। বেনাপোল বাইপাস সড়কের ফায়ার সার্ভিসের সম্মুখে ট্রাফিক আইল্যান্ড রেখে বাইপাশের সাথে মেইন সড়কের ২০ গজ জয়েন্ট সড়ক নির্মান করার দাবি জানান হয়। সর্Ÿশেষ বেনাপোলে আধুনিকমানের ৫০ শয্যাবিশিষ্ঠ হাসপাতাল নির্মাণ করার দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্য থেকে জানাযায়, বেনাপোল স্থলবন্দর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর। ভারতের সাথে অসম বাণিজ্যে বেনাপোল বন্দরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর দেশের সিংহভাগ শিল্পকারখানা ও গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রির মালামাল আমদানি হয় এই বন্দর দিয়ে এবং সার্বিকভাবে এখানে ৩০ হাজার কোটি টাকার মালামাল আমদানি-রপ্তানি হয়। ৫৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয় এই বন্দর থেকে। ইতিমধ্যে এ বন্দরটি এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত হয়েছে এবং ৪ দেশীয় ট্রানজিট করিডোর হয়েছে এই বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর। ভারতের কোলকাতা থেকে বেনাপোল অত্যন্ত সন্নিকটে বিধায় কম খরচে এ বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি করা সম্ভব। সে কারণে কোলকাতা থেকে বেনাপোল হয়ে পদ্ম সেতুসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মালবাহী ট্রাক চেসিস ও বিভিন্ন ধরণের দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল করে থাকে। প্রতিদিন এই পথে ৮/১০ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী ভারত বাংলাদেশ যাতায়াত করে। দু’দেশের প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির কথা বিবেচনা করে কোলকাতা-বেনাপোল-খুলনা রুটে সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন ও আন্ত:দেশীয় ঐতিহাসিক ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু হয়ে সরাসরি কোলকাতা-বেনাপোল-ঢাকা ট্রেন এবং সর্বপ্রকার যানবাহন বন্দর নগরী বেনাপোল হতে চলবে।
এসময় বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ সভাপতি আলহাজ¦ নুরুজ্জামান স্থানীয় সাংসদ আলহাজ¦ শেখ আফিল উদ্দিনের হৃদয়ের মর্মস্পর্শী কথা যা তিনি সংসদ ভবনে বলেছিলেন তার পূণরাবৃত্তি করে বলেন যশোর-বেনাপোল সড়ক আর্ন্তজাতিকমানের প্রসস্তকরণ এবং ৬ লেন করার লক্ষ্যে পুরাতন জরাজীর্ণ এবং অকার্যকর গাছ যা প্রতিনিয়ত কাভার্ড ভ্যান, দূরপাল্লার পরিবহন এবং মালবাহী ট্রাক পাশের গাছসহ উপরের ডালের সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এমনকি ঝড় হলেই গাছ সড়ক এবং বাড়ির উপরে উল্টে পড়ছে। যা অপসারণ জরুরী।
এসময় বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের কাস্টম বিষয়ক সম্পাদক ও পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ নাসির উদ্দিন বেনাপোল-যশোর মহাসড়ক নির্মানের ঠিকাদার মোজাহার কোম্পানীর নিয়মবর্হিভূত কাজের প্রতিবাদ জানান। বলেন, মোজাহার কোম্পানী যেভাবে যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত সড়কটি চওড়া করে কাজ শুরু করেছিল। পরবর্তীতে কার্পেটিংয়ের ক্ষেত্রে সে মোতাবেক কাজ না করে সড়কের উভয় পাশ হতে ৩ ফুট করে ৬ ফুট বাদ দিয়ে কার্পেটিং করছেন। ফলে সড়কটির উভয় পাশের্ উঁচু-নিচুর সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে দ্রæতগতিতে আসা যাওয়া করা বিভিন্ন শ্রেণীর যানবাহন একে অন্যকে সাইড দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এ কারণে তিনি প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরকে একটি আধুনিক মানের বন্দরে পরিনত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বেনাপোল বন্দরের উন্নয়ন ক্রমেই এগিয়ে চলেছে। এখন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বেনাপোলবাসীর উল্লেখিত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়িত হলে এ বন্দর উজ্জল ও সম্ভাবনাময় আধুনিক বন্দরে রুপান্তরিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক মহসিন মিলন, সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের নেতা আলহাজ¦ মজনুর রহমান নুপুর, মেহেরুল্লাহ মেম্বরসহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ।