খবর৭১ঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের জন্য মোবাইল অপারেটরদের দেওয়া ফ্রি ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী এখন আর কোনো অপারেটর ফ্রি ইন্টারনেট দিচ্ছে না। ফলে বিপুলসংখ্যক সাধারণ গ্রাহক যারা ফ্রি ইন্টারনেট দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালাতেন তারা বিপাকে পড়েছেন। গ্রাহকরা বলছেন, বিটিআরসি যে প্রেক্ষাপট দেখিয়ে এটা বন্ধ করল তাতে কি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে থাকবে? অপরাধীরা কি শুধু ফ্রি ইন্টারনেট দিয়েই অপরাধ করে? আর অপারেটররা যদি ফ্রি ইন্টারনেট দেওয়ার প্রতিযোগিতা করে তাহলে সরকারের সমস্যা কী? সাধারণ মানুষ তো লাভবান হচ্ছে।
গত সপ্তাহে বিটিআরসির পাঠানো চিঠিতে মোবাইল অপারেটরগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কিত সেবা ফ্রি বা বিনা মূল্যে প্রদানে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। যেখানে কারণ হিসেবে বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা হয়। এরপর গত ১৬ জুলাই অপারেটররা নিজেদের বিভিন্ন ফ্রি ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ার প্যাকেজ বন্ধ করে দেয়।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইত্তেফাককে বলেন, ‘এটা বন্ধ করার কয়েকটি গ্রাউন্ড আছে। এর একটি হলো অপরাধীরা ফ্রি ইন্টারনেটের সুযোগ নিচ্ছে। আমরা দেখেছি, যারা ফ্রি ইন্টারনেট দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন তাদের বড় একটি অংশ ভালো কাজে এটা ব্যবহার করছেন না। পাশাপাশি অপারেটরদের মধ্যেও ফ্রি ইন্টারনেট দিয়ে গ্রাহক টানার যে প্রতিযোগিতা তাতে সরকার রাজস্ব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ টাকা দিয়ে ইন্টারনেট কিনলে কি সেই ইন্টারনেট অপরাধ কাণ্ডে ব্যবহার হবে না? জবাবে মন্ত্রী বলেন, কেউ যখন টাকা খরচ করে কিছু করেন সেটা দিয়ে খারাপের চেয়ে ভালো কাজই বেশি হয়।
সরকার শিক্ষার্থীদের ফ্রি বা স্বল্পমূল্যে যেখানে ইন্টারনেট দিতে মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা করছে, ঠিক সেই সময়ে ফ্রি ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ কি দ্বৈত নীতি না? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট দিলে তো তারা সেটা লেখাপড়ার কাজে ব্যবহার করবে। এখানে তো অপরাধ হওয়ার সুযোগ নেই। আর এখন ইন্টারনেট তো শিক্ষা কারিকুলামেরই একটা অংশ হয়ে গেছে।
গত ৫ বছর আগে ২০১৫ সালে মোবাইল অপারেটর রবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফেসবুকের এ ইন্টারনেট ডটওআরজি প্রকল্প শুরু হয়। এতে ইন্টারনেট ডটওআরজিতে প্রবেশ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, খেলাধুলা, আবহাওয়া, সংবাদ, সরকারি সেবা সাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট বিনা ডেটা মূল্যে পাওয়া যেত। বিটিআরসির সিদ্ধান্তের ফলে এ প্রকল্পটা এখন বন্ধ হয়ে গেল।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলছেন, ফেসবুক সংক্রান্ত যাবতীয় ফ্রি অফার বন্ধে যে নির্দেশনা বিটিআরসি দিয়েছে সেটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। কারণ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের নির্দেশনা অনুসারে, একটি কোম্পানির ‘প্রমোশনাল’ ব্যয়ের পরিমাণ তার মোট আয়ের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। এ নির্দেশনা অনুসারে ফ্রি অফারকেন্দ্রিক কোনো ব্যয় নির্বাহ করা রবির মতো কোম্পানির জন্য স্বাভাবিকভাবেই কঠিন। তবে বিটিআরসির মনোযোগের জায়গা একটু ভিন্ন। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান ইত্তেফাককে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের জন্য দেওয়া ফ্রি ইন্টারনেটের কারণে বাজারে একটা অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে অসুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসির দায়িত্ব এ ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করা। পাশাপাশি আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে এই ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করে অপরাধমূলক কাজও সংঘটিত হচ্ছে।’
তবে টেলিকম সেক্টরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমিত আয়ের অনেকেই ফ্রি ইন্টারনেট দিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। এখন তাদের সেই পথ বন্ধ হয়ে গেল।