খবর৭১ঃ আর্থিক খাতে বহুদিন থেকেই রুগ্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঋণখেলাপি বেড়েছে বহুগুণ। এ অবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের প্রবণতা কমেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর।
গত বছরের শেষ ছয় মাসে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কার্যক্রমে কোনো অর্থ ব্যয় করেনি ২২ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে ৮ ব্যাংক ও ১৪ নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এতদিন বিষয়টি ঐচ্ছিক থাকায় এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তেমন কিছু বলার ছিল না। তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কর্মসূচির ব্যয়ের ৬০ শতাংশই করোনা সংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে করা বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যথায় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোরশেদ মিল্লাত যুগান্তরকে বলেন, যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে তা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এখানে সিএসআরের বিষয়টি ঐচ্ছিক ছিল। সে কারণে যারা সিএসআর খাতে ব্যয় করেনি তাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী ‘নিট প্রফিট আফটার টেক্স’ সরকারকে আয়কর দেয়াসহ যাবতীয় খরচ শেষে কোনো ব্যাংক লাভে থাকলে সে ব্যাংককে সিএসআর বাবদ লাভের ৬০ শতাংশ করোনায় ব্যয় করতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। কোনো ব্যাংক এ আদেশ অমান্য করলে তাকে অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নতুন এ নিয়ম কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সিএসআর কার্যক্রমে কোনো অর্থ ব্যয় করেনি এমন ৮টি ব্যাংক হচ্ছে : বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। এ ছাড়া ১৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হল : অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, সিভিসি ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি (বাংলাদেশ), লংকান অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স, মাইডাস ফাইন্যান্সিং, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।
এ সময় সিএসআর খাতে খুব সামান্য ব্যয় করেছে জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ব্যাংক আল ফালাহ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসি, হাবিব ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।
২০১৯ সালের শেষ ছয় মাসে ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা আগের ছয় মাসের তুলনায় ১৭০ কোটি টাকা বেশি। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত খাতটির ব্যয় ছিল ২৩৯ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৯ সালের শেষ ছয় মাসে সব নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এদিকে গত ১৭ জুন এক প্রজ্ঞাপনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচির ব্যয়ের ৬০ শতাংশই স্বাস্থ্য খাতে করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা উপকরণ ও সুরক্ষাসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে নির্ধারিত ব্যয়ের যে সীমা রয়েছে তা নিশ্চিত করতেও বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে: বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের জনস্বাস্থ্যে উদ্ভূত সংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
এ লক্ষ্যে সিএসআর কর্মকাণ্ডের আওতায় স্বাস্থ্য খাতে নিয়মিত কার্যক্রম কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবায় অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা উপকরণ (যেমন: পিসিআর, ভেন্টিলেটর মেশিন, অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্রয় এবং স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকসহ সবার স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসনে প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী) প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে হবে। এ সহযোগিতার আওতা জেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়: বিদ্যমান নির্দেশনা অনুযায়ী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের জনস্বাস্থ্যে উদ্ভূত সংকট মোকাবেলায় সিএসআর ব্যয় বণ্টনে স্বাস্থ্য খাতে ৬০ শতাংশ, শিক্ষা খাতে ৩০ শতাংশ এবং জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল খাতে ১০ শতাংশ ব্যয় করার নির্দেশনা রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব বিবেচনায় কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে নির্ধারিত ৬০ শতাংশ ব্যয়ের পরিমাণ এবং যথার্থতা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ফরম্যাটে এ সংক্রান্ত ব্যয়ের তথ্য পাঠানোর কথাও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।