বিশৃঙ্খলায় ডুবছে স্বাস্থ্য খাত

0
415
বিশৃঙ্খলায় ডুবছে স্বাস্থ্য খাত

খবর৭১ঃ

করোনা মহামারীর সময় দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের দুরবস্থার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পদে পদে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, স্বজনপ্রীতির ছবি একে একে প্রকাশ্যে আসছে। চিকিৎসাসেবার নামে স্বাস্থ্য খাতে চরম অব্যবস্থাপনার বিষয় মানুষের মুখে মুখে। দুর্যোগের সময় পুরো স্বাস্থ্য খাতের মুখোশ খুলে পড়েছে। করোনা টেস্টের নামে তোলপাড় চলছে। কোভিড-১৯ অজুহাতে অন্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হয়নি।

দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেননি। সর্বত্রই জিম্মি রোগী ও তাদের স্বজন। ছোট-বড় সব ধরনের কেনাকাটা, টেন্ডার জমা, পণ্য সরবরাহ না করেই টাকা তুলে নেয়া সবকিছুর সঙ্গে সেই পুরনো চক্রের জড়িত থাকার খবর আসছে। করোনাকালে কেনাকাটার নামে লুটপাট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নিয়োগ পদায়নেও থেমে নেই দুর্নীতি।

লাইসেন্স ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। এসবের সঙ্গে জড়িতদের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। তারাই আবার ফিরে ফিরে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য খাতের সর্বস্তরে পচন ধরেছে। তারা বলছেন, করোনা সামনে রেখেই পুরো স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

সবার দৃষ্টি এদিকে, এখনই সময় ভালো করার। প্রয়োজনে দ্রুত এ খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। স্বাধীন ন্যাশনাল হেলথ কমিশন গঠন করতে হবে। স্বাস্থ্য প্রফেশনালদের দিয়ে পরিচালনা করতে হবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী থেকে নিম্ন স্তর পর্যন্ত সবাইকে স্বাস্থ্য সম্পৃক্ত হতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল। অবকাঠামো আছে, যন্ত্রপাতি আছে, ওষুধ-পথ্যের সরবরাহ যাচ্ছে নিয়মিত। আছে চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুধু নেই কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা। রাজধানী থেকে শুরু করে নিভৃত পল্লী পর্যন্ত সর্বত্রই অভিন্ন অবস্থা। চিকিৎসকের বদলে নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়াসহ দালালরা নানা কায়দা-কৌশলে অসহায় রোগীদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। ডাক্তার সেজে অপারেশন করছে ওয়ার্ডবয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সবাই এসব জানেন। কিন্তু তেমন কোনো ব্যবস্থা নেন না।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সুযোগে এ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সাইনবোর্ডসর্বস্ব হাসপাতাল ও বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে করোনা চিকিৎসা ও নমুনা পরীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হলেও এর দায় কেউ নিচ্ছে না। অথচ এ অনিয়মের শিকার হয়ে ভুগছেন সাধারণ মানুষ। জেকেজির পর রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের অদক্ষতা ও ব্যর্থতাকে স্পষ্ট করেছে।

অনিয়ম-প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়েছে আরও একাধিক হাসপাতাল। সম্প্রতি পাঁচ প্রতিষ্ঠানের করোনাভাইরাস পরীক্ষার অনুমোদন বাতিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- কেয়ার মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, সাহাবুদ্দীন মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, স্টেমজ হেলথ কেয়ার, থাইরোকেয়ার ডায়াগনস্টিক এবং চট্টগ্রামের এপিক হেলথ কেয়ার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেছেন, এ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে কোভিড-১৯ আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি পরীক্ষার অনুমোদন দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কাজই শুরু করতে পারেনি।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন, স্বাস্থ্য খাতে সেটি অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করতে হবে।

মহামারীকালীন প্রথম দুর্নীতির খবর আসে মাস্ক নিয়ে। ২ এপ্রিল এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে বিশ্বসেরা এন৯৫ মাস্কের নামে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের তখনকার পরিচালক সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছিলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সুনাম নষ্ট করার জন্য অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। অথচ মাস্ক নিয়ে তদন্তে দুর্নীতি ধরা পড়ে।

দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অথচ মাস্কের মান নিয়ে প্রতিবাদ করায় দু’জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মানুষ যখন করোনা পরীক্ষা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে আছে, তখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন নিয়ে জেকেজির নকল সনদের বিষয়টি সামনে আসে।

এরপরই রিজেন্টের অনিয়ম দেশবাসীর সামনে ছবির মতো ঘুরছে। মানহীন পিপিই ও মাস্ক দেয়ায় প্রথমেই চিকিৎসকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিম্নমানের মাস্ক ও পিপিই কেনা হয়েছে। নার্স ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ ও পদায়ন নিয়ে দুর্নীতিও স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত বিষয়।
প্রশ্ন উঠেছে, এসব ঘটনায় কার দোষ বেশি, তা নিয়ে। মন্ত্রণালয়ের না অধিদফতরের।

রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে ১১ জুলাই অধিদফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল বিভাগ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়।’ ১২ জুলাই সংবাদপত্রে তা ছাপা হয়। ওইদিনই স্বাস্থ্য অধিদফতরের বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাতে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যাসহ জানাতে বলা হয়।

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কেনাকাটা নিয়ে অনিয়মের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। খালি বাক্স দিয়ে বা কোনো কাজ না করেই বিল তুলে নেয়ার ঘটনা নতুন নয়। এ খাত ঘিরে রেখেছে শক্তিশালী ঠিকাদারি সিন্ডিকেট। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের উদাসীনতায় দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকগুলো স্বেচ্ছাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দেশের প্রায় অর্ধেক বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অনুমোদন নেই। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা চরমে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য খাতে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে একটা কমিশন করতে হবে। যারা অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক ও চিকিৎসক সমাজের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ে রিপোর্ট প্রদান করবে। তার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ করুণ অবস্থার জন্য স্বাস্থ্য খাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও সেবাহীন বাণিজ্যিক মানসিকতাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। সরকারি হাসপাতালে সুচিকিৎসা রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক হাসপাতালেই এক শয্যায় দু-তিনজন রোগীকে রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে অবহেলা, ভুল চিকিৎসা আর পদে পদে রোগী হয়রানির রয়েছে হাজারও অভিযোগ।

বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় রোগীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ‘ফি’ আদায়ের পাগলা ঘোড়া থামানো যাচ্ছে না কোনোভাবেই। দিন দিন এমনকি ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাল্টে যাচ্ছে চিকিৎসার খরচ। খেয়াল-খুশিমতো বাড়ানো হচ্ছে সেবা ফি। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোয় নিয়ন্ত্রণহীন ‘সেবামূল্য’ আদায়ের কাছে রোগীরা জিম্মি।

এর সঙ্গে আছে, হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে নকল, ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ ব্যবহারের নজির। কিছু অসাধু ক্লিনিক মালিক ও চিকিৎসক এসব ওষুধ বিপণনকারীদের প্রলোভনে পড়ে রোগীদের যা-তা ওষুধ লিখে দিচ্ছেন এবং রোগীরা উচ্চমূল্যের জঞ্জাল কিনে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। কারণ এসব নকল, ভেজাল ও নিষিদ্ধ ক্ষতিকর ওষুধ গ্রহণ করে তারা অসুস্থ হচ্ছেন। এমনকি বহু ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছেন অনেকে।

দেশের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল পরিস্থিতি নিয়ে গত বছর টিআইবির অনুসন্ধানে সামগ্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ, বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি সর্বত্রই অনিয়ম-দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। এছাড়া যে কোনো টেন্ডার বা ছোটখাটো কাজের জন্যও গুনতে হচ্ছে ঘুষ। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।

যা স্বাস্থ্য অধিদফতর, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অসাধু ও প্রভাবশালীরা গ্রহণ করছেন। এছাড়া বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চিকিৎসকরা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন নিচ্ছেন। আর দালালরা নিচ্ছেন ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা এতটাই বেহাল যে, একজন চিকিৎসকের বিপক্ষে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা ৩ হাজার ২৯৭ জন। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী চিকিৎসক ও রোগীর অনুপাত হওয়ার কথা ১:৬০০।

সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এ খাতে অ্যাডহক চিকিৎসক ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৬৫ লাখ টাকা, বদলির ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা এবং পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হয়ে থাকে। এসব ঘুষ লেনদেনের সঙ্গে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ স্বাস্থ্য খাতের প্রতিটি বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, দেশে বৈধ লাইসেন্সে মাত্র ৭ হাজার ৬০০ প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক থাকলেও অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে দেড় লাখ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। কেউ কেউ লাইসেন্সের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন পাঠিয়েই বড় বড় হাসপাতাল খুলে বসেছেন। ভুঁইফোড় এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল বিভাগটি বরাবরই চরম উদাসীন।

বিএমডিসির হিসাবে, শুধু রাজধানীতে আড়াই সহস্রাধিক ভুয়া চিকিৎসক রয়েছেন। সারা দেশে এ সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। তবে বাস্তবে বিএমডিসির দেয়া পরিসংখ্যানের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি ভুয়া চিকিৎসক দেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদের পাশাপাশি জাল ডিগ্রিধারী ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের’ সংখ্যাও কম নয়। তারা এমবিবিএস পাসের পর নামের আগে-পরে দেশ-বিদেশের উচ্চতর ডিগ্রির নাম ব্যবহার করে বছরের পর বছর রোগী দেখছেন। মোটা অঙ্কের ফি আদায় করছেন।

সামগ্রিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ইকোনমিক্স ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল হামিদ বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের সব অংশেই পচন ধরেছে। তাদের নিয়োগ-পদায়ন ব্যবস্থা, কেনাকাটা, পেশাগত আচরণ, দক্ষতা, পেশাদারিত্ব সব জায়গায় অনিয়ম। এখান থেকে উত্তরণের সহজ কোনো পথ নেই।

একটা পরিকল্পনামাফিক সংস্কার করতে হবে। এ মুহূর্তে দুই বা তিন সদস্যের শক্তিশালী টাস্কফোর্স করতে হবে। তারা খুঁজে বের করবে সমস্যা কোথায়। তাদের মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে আইন-কানুন পরিবর্তন করতে হবে। এ পরিবর্তন করতে হবে আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের জন্য। এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। কেননা এক্ষেত্রে একটা অ্যাক্ট করতে হবে। যার মাধ্যমে একটি স্বাধীন ন্যাশনাল হেলথ কমিশন গঠন করতে হবে। তাদের পরমার্শ অনুযায়ী মন্ত্রণালয় সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য প্রফেশনালদের দিয়ে পরিচালনা করতে হবে। মন্ত্রী থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত সবাইকে স্বাস্থ্য সম্পৃক্ত হতে হবে। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রের জন্য নিয়ম, নিয়মের জন্য রাষ্ট্র নয়। তাই রাষ্ট্রের প্রয়োজনে নিয়ম পরিবর্তন করতে হবে। প্রয়োজনে বিসিএস হেলথ সার্ভিস গঠন করতে হবে। কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here