খবর৭১ঃ নিউইয়র্কে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ধর্নাঢ্য প্রযুক্তিবিদ ফাহিম সালেহ (৩৩) হত্যার রহস্যের সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও প্রকাশ পায়নি। তবে একাধিক বিষয়, বিশেষ করে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন এবং ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল কী না সে বিষয়গুলো সামনে রেখে পুলিশের তদন্ত চলছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে পুলিশ হেফাজতে আছেন সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি। খুব শিগগির হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে বলে পুলিশ আশাবাদী।
এদিকে ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, ফাহিম সালেহকে ইলেকট্রিক স্টানগান (টেজার) দিয়ে দুর্বল করে ঘাড় ও গলায় কাছে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে কেটে তার দেহ টুকরো করা হয়। পরে হত্যার প্রমাণ মুছে ফেলতে প্ল্যাস্টিক ব্যাগে ভরে লাশ অন্য কোথাও ফেলে দেওয়া হতো। কিন্তু ফাহিমের এক কাজিন তার খোঁজে আসায় সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কলবেলের শব্দ পেয়ে খুনি জরুরি বহির্গমণ সিঁড়ি দিয়ে বেরিয়ে গেছে, এমনটাই মনে করছেন গোয়েন্দারা।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে পুলিশ তদন্ত করলেও প্রথম প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে ব্যবসায়িক বিষয়কে। কারণ নাইজেরিয়ায় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘গোকাডা’ চালু করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছিলেন ফাহিম। পরে রাইড শেয়ারিং বন্ধ হয়ে গেলে তিনি চালু করেন পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস। সেটি ব্যবসা সফল হয়। শুধু নাইজেরিয়ায় নয়, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ায় একই রকম দুটি সার্ভিস চালু করেন ফাহিম সালেহ। এছাড়া নিউইয়র্কে চালু করেন মূলধনী সংস্থা ‘অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল’।
আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিশেষ করে নাইজেরিয়ায় ‘গোকাডো’ পরিচালনা নিয়ে কারো সঙ্গে ফাহিমের ব্যবসায়িক বিরোধ তৈরি হয়েছিল কী না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বাংলাদেশে ‘পাঠাও’ চালুর পর ব্যবসা সফল হওয়ার পরও সেখান থেকে কেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন ফাহিম এ বিষয়টিও পুলিশের নজরের বাইরে নেই। এদিকে ফাহিমের পরিবারে সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ।
পুলিশের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, খুনি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করে একটি গাড়িতে চড়ে ওই এলাকায় এসেছিলেন। পুলিশ সেই গাড়িটিরও সন্ধান পেয়েছে। সেই সূত্র ধরে সন্দেহভাজন খুনিকে তাদের কব্জায় নিলেও আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ।
পুলিশ বলছে, ফাহিম সালেহ লিফটে সপ্তম তলা নির্বাচন করতে একটি ‘কি ফোব’ ব্যবহার করেছিলেন। ‘কি ফোব’ সাধারণত ভবনের বাসিন্দা এবং অনুমোদিত ব্যক্তির লিফট ব্যবহারের জন্য। তবে পুলিশ যে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে সেখানে একজন ব্যক্তি কালো পোশাক পরা এবং একটি ব্যাগ হাতে ফাহিম সালেহের সঙ্গেই লিফটে প্রবেশ করে। কিন্তু ওই ব্যক্তি ‘কি ফোব’ ছাড়াই অন্য একটি তলা নির্বাচন করেছে এমন অভিনয় করেন। এসময় দুজনের মধ্যে বাক্য বিনিময়ও হয়। ভিডিও ফুটেজে শব্দ ধারণ না থাকায় তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে তা পুলিশের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। ফাহিম সপ্তম তলায় তার বাসার ফ্লোরে নেমে গেলে কালো পোশাক পরা লোকটিও নেমে যায় এবং ফাহিমকে লক্ষ্য করে ইলেকট্রিক স্টানগান বা টিজার জাতীয় কিছু ছুঁড়ে মারে। এরপরের কোনো দৃশ্যের বর্ণনা দেয়নি পুলিশ।
এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন নিহত ফাহিম সালেহের পরিবার। নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে এই হত্যাকা-টির অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। খুব শিগগির অগ্রগতি হবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় নিউইয়র্ক সিটির লোয়ার ইস্ট ম্যানহাটনের বিলাসবহুল কনডোমিনিয়াম (অ্যাপার্টমেন্ট) থেকে ফাহিমের টুকরো করা লাশ উদ্ধার করে নিউইয়র্ক পুলিশ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ধর্নাঢ্য এই তরুণ ২০১৫ সালে বাংলাদেশে চালু করেন জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘পাঠাও’। গত বছর সোয়া মিলিয়ন ডলার দিয়ে বিলাসবহুল কনডোমিনিয়ামটি কিনেছিলেন তিনি।