খবর৭১ঃ স্বাস্থ্যখাতে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে তা পর্যায়ক্রমে তৃণমূলে ছড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলীয় পরিচয়ে কেউ রেহাই পাবেন না এমন হুঁশিয়ারি বলেছেন, ‘অভিযান অব্যাহত থাকবে অনিয়মের আবর্তে থাকা অন্যান্য খাতেও। কেউই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। দলীয় পরিচয় দিয়ে অনিয়ম ঢাকা যাবে না।’
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে সংসদ ভবনের সরকারি বাসভবন থেকে এক ভিডিওবার্তায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা জনগণের মনের ভাষা বোঝেন। তার কাছে কোনো অপরাধীর ছাড় নেই। আসুন আমরা নিজের বিবেকের কাছে নিজে পরিশুদ্ধ থাকি। জবাবদিহি করি। অসহায় মানুষের হক নষ্ট না করে তাদের পাশে দাঁড়াই। তবেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। শেখ হাসিনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’
করোনা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে গোটা বিশ্ব আজ থমকে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথনকশায় এসেছে ছন্দপতন। বিশ্ব নেতৃত্বের সাথে সমন্বয় করে, করোনার আঁধার মাড়িয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে বীর জাতি হিসেবে পরিচিত বাঙালি আবরো ঘুরে দাঁড়াবে। সংকটকে সম্ভবনায় রূপ দিয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে আবরো গতি সঞ্চার হবে শেখ হাসিনার সৃজনশীল ও গতিশীল নেতৃত্বে- এ বিশ্বাস ও মনোবল আমাদের আছে।’
দেশ ও জাতির যেকোনো সংকটে শেখ হাসিনার মানবিক নেতৃত্ব ও দক্ষতার ওপর আমাদের দৃঢ় আস্থা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা সকল চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করি। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে। বিশ্বের তাবৎ দেশ হিমশিম খাচ্ছে করোনা মোকাবিলায়। কোথাও কোথাও সেকেন্ড ওয়েব শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারে নজর দেই। আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি শেখ হাসিনার সাহসী ও মানবিক নেতৃত্বের কারণে। আসুন আমরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলি। কোরবানির পশুর হাটে, গণপরিবহনে, বাস-ট্রেন-লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে সমাগম এড়িয়ে চলি। কঠোর ভাবে প্রতিপালন করি স্বাস্থ্যবিধি। সংকটে নিজেকেই ঘরে পাহারাদার হতে হবে। উদাসীনতা প্রদর্শন করে নিজেকে ঝুঁকিতে পড়তে চাইলে কেউ বাঁচাতে পারবে না।’
ওয়ান ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনার জেলে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের আস্থার প্রতীক জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের এই দিনে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণের অধিকার আদায়ের কণ্ঠস্বরকে অবরুদ্ধ করেছিল। তিনি ১১ মাস কারাবন্দি ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালের ১০ জুন তিনি কারামুক্ত হন।’
কাদের বলেন, ‘পিতা মুজিবের পথ অনুসরণ করে মানুষের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত মানুষের আশার প্রদীপ শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং দেশকে সমৃদ্ধির সোপানের শীর্ষস্থানে পৌঁছাতে তার নিরলস প্রয়াস আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত, সমাদৃত। বারবার মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা মৃত্যুঞ্জয়ী বীর ধ্বংসস্তূপের পাশ থেকে যিনি সৃষ্টির পতাকা উড়ান, সংকটকে রূপ দেন অসীম সম্ভাবনায়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেদিন শেখ হাসিনাকে বন্দী করে যারা রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চেয়েছিল, রাজনীতিবিদদের হাত থেকে জনমানুষের মুক্তির লড়াই রূদ্ধ করতে চেয়েছিল এগার মাসে তারা বুঝে নিয়েছিল মুক্ত শেখ হাসিনার চেয়ে বরং বন্দী শেখ হাসিনা অধিক শক্তিশালী ছিল।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা তাকে পরবর্তী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রিত্বের মুকুট পরিয়ে দেয়। এরপর থেকে চলছে ভিন্ন এক বাংলাদেশ বিনির্মাণে লড়াই। বাঙালির দৃষ্টিসীমা আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশে নিয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপনের মধ্য দিয়ে। আমাদের সীমিত সীমানার পরিধি বাড়িয়ে যুক্ত করেছে সাগরে নীলাভ সম্ভাবনা। বহু বছরের অমীমাংসিত সিটমহল সমস্যার সমাধান করেছেন। সীমান্ত সমস্যার সমাধান করেছেন কূটনীতিক দক্ষতায়। দারিদ্র বিমোচনসহ বদলে দিয়েছে দেশের চিরচেনা দৃশ্যপট। বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে পেরেছি। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আজ বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে শেখ হাসিনার সৃষ্টিশীল নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু এনে দিয়েছেন ভৌগলিক মুক্তি, স্বাধীনতার অপূর্ণ সাধ আর তার কন্যা শেখ হাসিনা এনে দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি।’