রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণে সতর্ক সরকার

0
490
রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণে সতর্ক সরকার

খবর৭১ঃ করোনা পরিস্থিতির কারণে সদ্য বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ২৬ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ১৭ ভাগ। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয়ের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণে সতর্ক সরকার।

আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা, ভোগ ও ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। দেশীয় রপ্তানিকারকরাও আছেন অস্তিত্ব সংকটে। এ কারণে উচ্চাভিলাষী হওয়ার পরিবর্তে চলতি ২০২০-০২১ অর্থবছরের জন্য রপ্তানি খাতে সংকুচিত লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে নতুন রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার ঘোষণা দেবেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য ছিল ৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে প্রকৃত আয় হয়েছে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এরইমধ্যে ইপিবি থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পণ্য খাতে ৩৭.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক পর্যালোচনা ও দেশের রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সার্বিক খাতের ফিজিবিলিটি স্টাডির পর খাতভিত্তিক ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়ে ইপিবি এ লক্ষ্যমাত্রার প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছে।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অনুবিভাগ সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা এ বিষয়ে রাইজিংবিডিকে জানান, ইপিবির প্রস্তাব ধরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে আলোচনা হবে। সেখানে খাতভিত্তিক সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা অবহিত হবেন মন্ত্রী। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ইপিবির প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রাকে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কাটছাঁট অথবা আরো বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন। এর আগে কোনো হিসাবই চূড়ান্ত নয়।

বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি ও সংসদ সদস‌্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী বুধবার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হবে, সেটা যেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতার নিরিখে হয়। এখন দেশের রপ্তানি খাত অস্তিত্ব সংকটে আছে। সবচেয়ে সংকটে আছে পোশাক খাত। এখানে ধারাবাহিকভাবে কমছে রপ্তানি আয়। তাই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলে তার ভার এ দুঃসময়ে রপ্তানি খাত বইতে পারবে না।’

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘রপ্তানি খাতে এখন যে লেজেগোবরে অবস্থা, তাতে সরকারের নীতি সহায়তা না পেলে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া কঠিন। রপ্তানিকারকরা বিনিয়োগ বুঝে আয়ের চেষ্টা করেন। কখনো প্রত্যাশার চেয়েও বেশি আয় করেন। কিন্তু এখন বিশ্ব পরিস্থিতি পাল্টেছে। বাড়তি আয় তো দূরের কথা, ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন চ্যালেঞ্জ। তাই অর্জনযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হওয়া উচিত, উচ্চাভিলাষী নয়।’

৩১টি বিভাগে ৭২০টি পণ্য রপ্তানি হয়। এরমধ্যে পোশাক খাতেই ৮৪ শতাংশের বেশি আয় হয়। সদ্য বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ৯২ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৮.১২ ভাগ। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতে ১৮.১২ শতাংশ এবং ওভেন গার্মেন্ট খাতে ১৭.৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে। অন্যদিকে, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে আয়ের লক্ষ্য ছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৯০ লাখ ৮৩ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪০.২৮ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে আয় হয়েছিল ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার ডলার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here