খবর৭১ঃ রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার (১৫ জুলাই) এ নির্দেশ দেন। ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঁচজন রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা পৃথক দুটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে এ আদেশ দিলেন আদালত।
আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক, মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ ও নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব। আর ইউনাইটেড হাসপাতালে পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমান খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
গত ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে এসি বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাট ঘটে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদের মধ্যে ছিলেন চারজন পুরুষ এবং একজন নারী।
মৃতরা হলেন মো. মাহবুব (৫৭), মো. মনির হোসেন (৭৫), ভেরুন এ্যান্থনী পল (৭৪), খাদেজা বেগম (৭০) এবং রিয়াজুল আলম লিটন (৪৫)। ওই ঘটনায় ৩০ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব ও ব্যারিস্টার শাহিদা সুলতানা শিলা। পরে পহেলা জুন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকেও পৃথক একটি রিট আবেদন করা হয়।
ওই রিট আবেদনে গত ২ জুন হাইকোর্ট এক আদেশে আগুনের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশে ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্যরা গত ১৪ জুন প্রতিবেদন দাখিল করে। ওইসব তদন্ত প্রতিবেদনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। রাজউকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমতি ছাড়াই করোনা আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হয়। এই প্রতিবেদন দেখার পর গত ২৯ জুন হাইকোর্ট পৃথক আরেক আদেশে উভয়পক্ষকে সমঝোতা করতে বলেন। এছাড়া অবহেলাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন।
আজ আদেশের পর রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী নিয়াজ মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্ট উভয়পক্ষকে সমঝোতার করার নির্দেশ দেওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকলপক্ষকে বসার জন্য চিঠি দেয়। এরপর সবাই এক বৈঠকে বসেন। সেখানে মৃত মনির হোসেনের পরিবারের সঙ্গে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে হাসপাতালের সমঝোতা হয়। অপর মৃত চারজনের পরিবার এতে রাজি হয়নি।
এ অবস্থায় বিষয়টি আদালতকে জাননো হলে আজ আদলত বাকি চারজনের প্রত্যেকের পরিবারকে ৩০ লাখ করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী নিয়াজ মাহমুদ।