খবর৭১ঃ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়। এর আগে বাদ জোহর রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
কঠিন এ সময়েও এই মুক্তিযোদ্ধার জানাজায় বিপুল লোকসমাগম হয়। কর্মপ্রাণ ও সফল এ উদ্যোক্তার জানাজায় অংশ নিয়ে সবাই তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।
জানাজার আগে বাবার রুহের মাগফিরাত ও বেহেশত কামনায় দোয়া চান মরহুমের ছেলে ও যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময়ে দেশের কল্যাণে তার বাবার অবদানের কথা স্মরণ করেন। জানাজায় অংশ নেয়ার জন্য সব মুসল্লির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শামীম ইসলাম।
এর আগে সোমবার বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শিল্পপতি নুরুল ইসলাম। গত ১৪ জুন নুরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
১৯৪৬ সালে নবাবগঞ্জের চুড়াইন ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নুরুল ইসলাম। তার বাবার নাম আমজাদ হোসেন। মায়ের নাম জমিলা খাতুন।
তার স্ত্রী সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান জাতীয় সংসদের এমপি সালমা ইসলাম। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার তিন মেয়ে- সোনিয়া ইসলাম, মনিকা ইসলাম ও রোজালিন ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক।
যমুনা গ্রুপ বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পগ্রুপ। ১৯৭৪ সালে নুরুল ইসলাম যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প এবং সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৪১টি প্রতিষ্ঠান। তার হাতে গড়া দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন আজ দেশের শীর্ষস্থানীয় পাঠক ও দর্শকপ্রিয় গণমাধ্যম।
২৫ বছর বয়সে তিনি দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। একজন সাহসী ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলেন অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে লক্ষাধিক মানুষের।
সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে সারাটি জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন শিল্প খাতের এই সফল ‘আইকন’।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীনের পর দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন দুর্নীতি ও ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে সাহসী এ কণ্ঠস্বর।
নুরুল ইসলামকে যারা কাছ থেকে দেখেছেন, তারা বলেছেন অন্যায়ের কাছে জীবনে কখনও তাকে মাথানত করতে দেখেননি। রক্তচক্ষুর ভয়ে কখনও ভীত বা একচুলও পিছপা হননি এ মুক্তিযোদ্ধা।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নই ছিল যার স্বপ্ন। বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আজ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সেই স্বপ্নবাজ মানুষটি।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এ ছাড়া তার মৃত্যুতে যুগান্তর পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। তার মৃত্যুতে দেশের শিল্প খাতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় অসময় চলে গেলেন তিনি।