খবর৭১ঃ দেশে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে করোনাভাইরাসে পরীক্ষার সংখ্যা কেন কমে গেছে, সে ব্যাপারে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা জানিয়েছে, অনেকগুলো কারণে কমে গেছে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সংখ্যা।
দেশে গত দুই সপ্তাহ ধরে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা কমছে। এর ফলে দেশে শনাক্ত মানুষের সংখ্যা কমলেও হার বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১৩ ও পাকিস্তানে ১২ শতাংশের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর বাংলাদেশে এটি ২৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
দেশে কিছুদিন ধরে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১২ হাজারের কাছাকাছি রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৭টি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৪২৩টি নমুনা। যদিও জুন মাসেও প্রতিদিন ১৭ হাজার করে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ার কারণে রোগী শনাক্তের সংখ্যাও কমেছে। যদিও এখনো পরীক্ষার বিবেচনায় প্রতি চারজনে একজন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। আগে এই হার ছিল ২১ শতাংশের কাছাকাছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা সোমবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমার তথ্য বিশ্লেষণে দেখছি, আমাদের নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার সংখ্যা পূর্বের তুলনায় কমেছে। এর কারণ হিসাবে অনেকগুলো ব্যাখ্যা দেয়া যায়। সুস্থতার সংজ্ঞা অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, যারা সুস্থ হয়ে গেছেন, তাদের দ্বিতীয়বার আর পরীক্ষা করানোর দরকার হচ্ছে না। এজন্য পরীক্ষার সংখ্যা কিছুটা কমেছে।’
কম পরীক্ষার পেছনে কারণ হিসেবে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘পরীক্ষা করানোর জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি ফি ধার্য করা হয়েছে। সেই কারণে কিছুটা কমতে পারে।
তাছাড়া মানুষের মধ্যে আতঙ্ক অনেকটাই কমে গেছে। মানুষ পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে।’
ডা. নাসিমা সুলতানা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমাদের যেসব বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যেখানে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সময় নির্দিষ্ট, সেখানে তিনটার পরেও অনেকে নমুনা দেয়ার জন্য লাইন দাঁড়িয়ে থাকতেন। কিন্তু এখন একটার পরেই বুথগুলো শূন্য হয়ে যায়। নমুনা পরীক্ষা করার জন্য কেউ আসে না।’
তিনি বলছেন, ‘নমুনা পরীক্ষা করার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে। সেই কারণে পরীক্ষাগারে নমুনা আসছে না। তাই নমুনার সংখ্যা কমে গেছে।’
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘সবাইকে বলবো, যাদের নমুনা পরীক্ষা করা দরকার, তারা অবশ্যই আপনারা নমুনা যেখানে সংগ্রহ হয়, সেখানে যাবেন এবং নমুনা দেবেন, পরীক্ষা করবেন।’
অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকার একটি ফি নির্ধারণ করলেও, দরিদ্রদের জন্য পরীক্ষা এখনো বিনামূল্যে রয়েছে।
তিনি বলছেন, ‘দরিদ্রদের জন্য নমুনা এখনো ফ্রি। যে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নমুনার জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেখানে উল্লেখ আছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য, দরিদ্র মানুষের জন্য নমুনা সংগ্রহ ফ্রি। কাজেই আপনারা সরকারের এই সুবিধা অবশ্যই গ্রহণ করতে পারেন। যাদের দরকার অবশ্যই নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করাবেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনার পরীক্ষাগার বাড়লেও পরীক্ষার সংখ্যা কমছে। দেশে এখন ৭৭টি পরীক্ষাগারে এর মধ্যে প্রতিদিনই কিছু না কিছু বন্ধ থাকে। গত শুক্রবার নয়টি ও শনিবার পাঁচটিতে কোনো পরীক্ষা হয়নি।
দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ওই দিন করোনা শনাক্তের হার ছিল ৪৩ শতাংশ। সাতজনের পরীক্ষা করে তিনজন শনাক্ত করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে নমুনা পরীক্ষা বাড়তে থাকে। এরপর ২০ মে পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের মধ্যেই ছিল। আর এখন এটি ২৫ শতাংশ। প্রথম দিনের পর এটি দেশে সর্বোচ্চ।
সামগ্রিকভাবে গতকাল পর্যন্ত ভারতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৭ শতাংশ। পাকিস্তানে এটি প্রায় ১৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশে এ হার প্রায় ২০ শতাংশ। প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে নমুনা পরীক্ষার দিক থেকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।