খবর৭১ঃ ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলা, দুধকুমর ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দুই শতাধিক চর ও নিম্নাঞ্চলের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫৬ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় অনেকেই রাস্তা ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন।
সোমবার ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেযে ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, দুধকুমর নদীর পানি বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪৫ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয়বার বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চল ও নদনদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। প্রথম দফা বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতেই আবারও বন্যার কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, সোমবার ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেযে ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, দুধকুমর নদীর পানি বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪৫ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার সমান্তরাল রেখায় প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলা নদীর পানির প্রবল চাপে সদর উপজেলার সারডোবে একটি বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ১৯টি পয়েন্টে ভাঙন তীব্ররূপ নিয়েছে।
এর মধ্যে ১১টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানিয়েছেন, পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় ৪৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ করোনাভাইরাস টেস্ট নিয়ে প্রতারণাঃ ডা. সাবরিনা ৩ দিনের রিমান্ডে
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন ২০ গ্রামের মানুষ। পাঙ্গারচরের অধিবাসী দারোগ আলীর পরিবার ১৭ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে। নিচু এলাকায় বাড়ি হওয়ায় প্রথম দফার বন্যার পানি থাকাবস্থায় দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়ে সড়কে আশ্রয় নিয়েছে।
দারোগ আলী (৪৫) ও তার স্ত্রী হালিমা (৩৫) জানান, আমার পরিবারে ছোট ছোট সাতটি সন্তান। বন্যার কারণে ১৭ দিন ধরে ঘরছাড়া। প্রথম দফায় ১০ কেজি চাল পেয়েছি। তা শেষ হয়ে গেছে। এখন নাবালক শিশুদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আপনারা একটু দেখবেন।
মহাসড়কে আশ্রয় নেয়া শহিদুল (৪৫) ও তার স্ত্রী মেরিনা (৩৪) জানান, প্রথম দফা বন্যায় বাড়ি ছেড়ে ১০ দিন এখানে ছিলাম। পরে পানি নেমে গেলে বিধ্বস্ত বাড়িঘর ঠিক করে দুটো রাত ঘুমুতে না ঘুমুতে আবার বন্যা। কামকাজ নাই। কেউ ত্রাণও দিল না। এখন কার কাছে হাত পাতি।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম জানান, আমার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বীজতলার। এই পানি বেশিদিন অবস্থান করলে বীজতলাসহ বন্যাকবলিতরা খাদ্য সমস্যায় ভুগবে। এই মুহূর্তে বন্যা কবলিতদের উদ্ধারসহ ত্রাণ সহায়তা দরকার।
আরো পড়ুনঃ করোনা মহামারীঃ ৪০ লাখ কোরবানির পশু অবিক্রিত থাকার আশঙ্কা
এদিকে ধরলার পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়ার চর ও সদর উপজেলার সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। একইভাবে তিস্তার ভাঙনে দলদলিয়া ইউনিয়নের সরদারপাড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভাঙনের কবলে পড়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৪০০ টন চাল, আট লাখ জিআর ক্যাশ, দুই লাখ টাকার শিশু খাদ্য, দুই লাখ টাকার গোখাদ্য এবং চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা দ্রুত বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণ করা হবে।