খবর৭১ঃ করোনাভাইরাস পরীক্ষার টেস্ট না করেই রিপোর্ট ডেলিভারি দেয়া জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা এ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার দুপুরে তাকে তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
জেকেজি হেলথ কেয়ারের করোনা টেস্ট নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাবরিনা তারই স্ত্রী। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ সাবরিনাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি টেলিফোনে বলেন, ডা. সাবরিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা টেস্ট নিয়ে জেকেজি হাসপাতালের জালিয়াতির ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা অধিকতর তদন্তের স্বার্থে ডা. সাবরিনাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এর আগে গত ৪ জুন স্বামী আরিফুলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে সাবরিনা তেজগাঁও বিভাগের একটি থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। তবে অন্তত দুই মাস আগে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সাবরিনা দাবি করেন। জেকেজির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল এবং নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিত। এ বিষয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২২ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফকেও গ্রেফতার করা হয়।
এই ঘটনার পর ২৪ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের নমুনা সংগ্রহের যে অনুমোদন ছিল তা বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই জেকেজি প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৪৬০ টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করে। পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজি হেলথকেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনার টেস্টের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনার আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপে তৈরি করা হয়। জব্দ করা ল্যাপটপে এর প্রমাণ মিলেছে। আরিফ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান, জেকেজির ৭-৮ কর্মী ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করেন।
জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়া মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতেন। প্রতি রিপোর্টে ৫-১০ হাজার টাকা নেয়া হতো। আর বিদেশিদের কাছ থেকে নেন ১০০ ডলার। সেই হিসাবে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্টে প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জেকেজি।
২৪ জুন জেকেজির গুলশান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতারক আরিফসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দুদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জেকেজির কার্যালয় থেকে ল্যাপটপসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার কোনোটিতে এখন পর্যন্ত ডা. সাবরিনার নাম সংযুক্ত করা হয়নি। চারটি মামলার তদন্ত করছে তেজগাঁও থানা পুলিশ।
আরিফ গ্রেফতার হওয়ার পর ডা. সাবরিনা গ্রেফতার-আতঙ্কে গা ঢাকা দেন। আড়ালে ‘অদৃশ্য শক্তির’ ইশারায় দায়মুক্তির চেষ্টায় ছিলেন তিনি। করোনা মহামারীতে মানুষের জীবন নিয়ে নির্মম প্রতারণায় নাম উঠে আসা ডা. সাবরিনা এ চৌধুরী সরকারি একটি হাসপাতালে চাকরির পাশাপাশি জেকেজির চেয়ারম্যান।
তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক। পাশাপাশি তিনি জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান। আর তার স্বামী আরিফ চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।