করোনা ভাইরাসের টিকা পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ

0
346
করোনা ভাইরাসের টিকা পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ
ড. ফেরদৌসী কাদরি, জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী, আইসিডিডিআরবি। ছবিঃ সংগৃহীত।

খবর৭১ঃ প্রায় প্রতিদিন আমাকে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা কবে আসছে? বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯-এর টিকার জন্য যে তৎপরতা চলছে, এর আগে অন্য কোনো রোগের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি।

কোভিড-১৯ আমাদের বড় বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এখন সবাই তাকিয়ে আছি একটি টিকার দিকে। কোভিড-১৯-এর টিকার জন্য যে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা, সেখানে কোনো দেশই বাকি নেই। ব্যবহার এবং গবেষণা—কোনো না কোনোভাবে সব দেশই এই কাজে যুক্ত রয়েছে। সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১৮৫টি টিকা বা টিকা তৈরির জন্য কাজ চলছে। এর মধ্যে ১২৫টি তৈরির নানা ধাপে আছে। টিকা তো তাড়াতাড়ি তৈরি করে ফেলার মতো কোনো বিষয় না। এর জন্য নানা স্তর পার হতে হয়। এখন কিছু টিকা একেবারে তৃতীয় ধাপে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে। আর প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ২১টি টিকা আছে।

টিকার জন্য প্রথমে গবেষণাগারে কিছু কাজ হয়। সেখানে যদি বোঝা যায় যে টিকা তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাওয়া গেছে, তখন সেটা নিয়ে আরও কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর প্রি-ক্লিনিক্যাল স্তরে নিয়ে যেতে হয়। এ জন্য কোনো একটি প্রাণীর মডেল (অ্যানিমেল মডেল) নির্ধারণ করা হয়। কোভিড-১৯-এর অ্যানিমেল মডেল হলো প্রাইমেট (বানর)। এর ওপর কাজ করে গবেষকেরা দেখতে চান, টিকা দেওয়ার প্রতিক্রিয়া (রেসপন্স) কেমন হলো। প্রতিটি অঙ্গকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এগুলো করার পর ওই প্রাণীকে আবার চ্যালেঞ্জ করা হয়। প্রাণীর দেহে বিভিন্ন পরিমাণে ভাইরাসটা দেওয়া হয়। সেখান থেকে বোঝা যায় যে কতটুকু সহ্য করতে পারে প্রাণীটি।

প্রি-ক্লিনিক্যাল স্তরের পর আসে প্রথম ধাপ। এখানে অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে টিকা প্রয়োগ করা হয়। সেখানে সেফটি বা টিকাটি কতটুকু নিরাপদ, তা দেখা হয়। একটি টিকার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি নিরাপদ কি না, তা বিচার করা। এরপর দ্বিতীয় স্তরে এই নিরাপত্তার বিষয়টিই আবার দেখা হয়, তবে তা বেশিসংখ্যক মানুষের মধ্যে। এটা ২০০ থেকে ৪০০ বা ৫০০ হতে পারে। সেখানে যদি দেখা যায় যে নিরাপদ আছে, তবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু তৈরি হয় (ইমিউন রেসপন্স), সেটা দেখা হয়। এগুলোর পাশাপাশি আরও নানা কাজ হয়। আর এসব কাজ হয় খুব সাবধানতার সঙ্গে। একাধিক কমিটি থাকে। তারা এসব পর্যবেক্ষণ করে। এরপর তৃতীয় ধাপে যায়। এ ধাপে অনেক লোকের মধ্যে প্রয়োগ হয়। বাস্তব জীবনে মানুষকে যদি টিকাটা দেওয়া হয়, তখন কতটুকু নিরাপদ এবং কার্যকর হবে, সেটাই এ স্তরের দেখার বিষয়। এটি রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে কি না, সেটাই এখানে দেখার বিষয় থাকে।

কোভিড-১৯-এর টিকার জন্য বাংলাদেশ অনেক আগ্রহ নিয়ে অনেক চেষ্টা চালাচ্ছে। এক বা একাধিক টিকা যেন আমরা পরীক্ষা করতে পারি এবং আমরা যেন টিকা পেতে পারি, সে চেষ্টা হচ্ছে। ডব্লিউএইচওর (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) একটি নীতি হলো, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ যেখানেই হোক, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ভিন্ন কোনো দেশে হতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ অতিক্রম করা কোনো টিকা দেশের সব নীতিমালা মেনে আমরা দেশে আনব। এভাবেই আমরা অগ্রসর হব। সেই চেষ্টা চলছে এখন।

আমি আশাবাদী, যেসব দেশ কোভিড-১৯-এর টিকা প্রথম দিকে পাবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে। গত জুন মাসে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলন হলো, গ্যাভির (টিকাবিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট) সম্মেলন হলো। এসব সম্মেলনে একটি বিষয় উচ্চারিত হয়েছে যে সবাই যেন টিকা একসঙ্গে পায়। বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাওয়া ৯০টি দেশের মধ্যে আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থা চেষ্টা করছে, যেসব টিকা হবে, সেগুলোর কোনো পেটেন্ট (স্বত্ব) যেন না থাকে। যেন সব দেশের সমান সুযোগ থাকে। এটা কড়াভাবে নজরদারি করতে হবে। বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানি যারা টিকা তৈরি করছে, তাদের সঙ্গে গিয়ে যোগ দিয়েছে। এর ফলে টিকা উন্নত দেশে চলে যাওয়ার শঙ্কা আছে। তবে তা যেন না হয়, সেই চেষ্টা আছে। তবে এর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের ওষুধ উৎপাদনকারীরাও ঢুকে গেছে টিকার কাজে। সবকিছু মিলিয়ে সেই প্রচেষ্টাই চালাতে হবে, আমরা যেন ঠকে না যাই।

লেখকজ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী, আইসিডিডিআরবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here