বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের বয়সসীমা বাড়ল ২ বছর

0
321
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের বয়সসীমা বাড়ল ২ বছর

খবর৭১ঃ

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বয়স ২ বছর বাড়িয়ে জাতীয় সংসদে বিল পাস করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান ‘বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২০’ নামে বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন। ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু, রওশন আরা মান্নান ও পীর ফজলুর রহমান এবং বিএনপির মো. হারুনুর রশীদ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় সদস্যরা প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে বলেন, সরকার একজন বিশেষ ব্যক্তিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে রাখতে এ বিল এনেছে। অথচ সেই ব্যক্তি আর্থিক খাতে সংস্কারে ব্যর্থ হয়েছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা আরও বলেন, বর্তমান গভর্নর ও আগের গভর্নর দু’জনই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। তারা দায়িত্ব থাকাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা পাচার হয়েছে। সেই টাকা এখনও ফেরত আনা যায়নি। তাই বয়স না বাড়িয়ে নতুনদের সুযোগ দেয়া উচিত।

জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের অর্থ ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় স্তম্ভ। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিশাল ব্যাপ্তি তার সঙ্গে তুলনা করে সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের পূর্বের গভর্নর যারা ছিলেন, তারা সবাই অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন, প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ছিলেন। এমনকি সরকারি কর্মচারীদের আগে বয়স ছিল ৫৭ বছর। আমরা যখন চাকরি করতাম তখন ৫৭ ছিল। এখন সরকার পরিবর্তন করে বাড়ানো হয়েছে।

বিচারপতিদের ৬৭ বছর পর্যন্ত উপভোগ করছেন। সুতরাং সময়ের পরিবর্তনে স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে। অনেক বেশি নতুন নিয়মকানুন আসছে। এটার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে গিয়ে আইনকানুন পরিবর্তন করতে হয়। মন্ত্রী আরও বলেন, গভর্নরের বয়স বাড়ানো কোনো ব্যক্তির বিষয় নয়। এখন থেকে যারা গভর্নর হবেন, এ সংসদ পুনরায় পরিবর্তন না করা পর্যন্ত এ ৬৭ বছর থাকবে।

আগের আইনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার অনুযায়ী ৬৫ বছরের বেশি বয়স হলে কেউ গভর্নর পদে থাকতে পারবেন না। তাই বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরের বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ নেই। ৩ জুলাই ছিল ফজলে কবিরের শেষ কর্মদিবস। কিন্তু আইন সংশোধন হওয়ায় সরকার চাইলে তাকে পুনরায় চুক্তিতে নিয়োগ দিতে পারবে।

পাস হওয়া বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২-এর আর্টিকেল ১০-এর (৫) এর শর্তাংশ অনুযায়ী গভর্নরের কার্যকাল বা মেয়াদ ৪ বছর এবং তাকে পুনঃনিয়োগ করা যাবে। তবে, উক্ত ক্লজ (৫)-এ উল্লেখ রয়েছে যে, ৬৫ বছর বয়স পূর্তির পর কোনো ব্যক্তি গভর্নর পদে আসীন থাকিতে পারিবে না। আরও বলা হয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের রাজস্ব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কার্যকর মুদ্রানীতি প্রণয়ন, মুদ্রা সরবরাহ ও ব্যাংকের ঋণ সরবরাহ ও ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ মুদ্রামান-সংরক্ষণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধন প্রভৃতি বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দেশের সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যকর ও উন্নতর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাই উক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রাজ্ঞতা, বিচক্ষণতা, কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ববাচক গুণাবলি প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের মূল নিয়ামক শক্তি বিবেচনায় উক্ত পদে যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তিকে বিদ্যমান বয়সসীমা অপেক্ষা অধিকতর বয়সে নিয়োগের সুযোগ রাখা কিংবা প্রয়োজনবোধে উক্ত পদে সমাসীন ব্যক্তিকে বিদ্যমান বয়সসীমা অতিক্রমণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যতা অনুসারে পুনর্নিয়োগ প্রদান কিংবা উক্ত ব্যক্তির নিয়োগের নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা বজায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন।

তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৫ বছরের স্থলে ৬৭ বছর নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here