ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ বর্ষাকালে সাধারণত ভেলায় চড়ে শাপলা ফুল তোলার দৃশ্য দেখে আমরা সবাই অভ্যস্ত। কিন্তু এ বছর অগ্রীম অতি বর্ষণের কারণে ভেলায় চড়ে আম তোলার মতো দূর্লভ দৃশ্য জেলার অনেক আম বাগানেই দেখা যাচ্ছে। তবে বাগানগুলো নিচু ধানি জমিতে হওয়াই এর কারণ বলছেন আম চাষিরা।
গত কয়েকদিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের লোহাগাড়া, বনবাড়ি, অতরগাঁও গ্রামের বাগানগুলোতে আম চাষিদের ভেলায় চড়ে আম তুলতে ব্যস্ত দেখা যায়।
এদিকে, ভরা মৌসুমে আমের ফলন ওঠার আগে অতিবর্ষণ আর জলাবদ্ধতা, যেন মরার উপর খারার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের আম চাষিরা এবার কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না। টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বাগানের পরিচর্যা করতে পারেনি আম চাষিরা। প্রকৃতির বিরুপ আচরণে বিবর্ণ হয়ে গেছে বাগানের অধিকাংশ আম। সেই আম নিতে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের।
তাই এবার কম দামে আম বিক্রি করে কাঙ্খিত লাভের মুখ দেখছেন না চাষিরা। ভারী বৃষ্টিতে ৫শ’ হেক্টর জমির আম বাগানে সৃষ্টি হয়েছে জলবদ্ধতা। তাই আম তুলতে দুর্ভোগে পড়ছেন তারা।
বাগান মালিকরা জানায়, আমের গাছ পানিতে ডু্বে যাওয়াতে আমের রং ও স্বাদ নষ্ট হচ্ছে। অতিদ্রুত আম সব আম গাছ থেকে না নামালে সব আম নষ্ট হয়ে পড়বে। সাধারণত আম্রপালি জাতের আমে কিছু কিডস আম গাছে রেখে থাকে বাগানীরা যা পড়ে বিক্রি করে বেশ মুনাফা পায়। কিন্তু এবার গাছ পানিতে ডোবার জন্য সেই মুনাফা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
বাগান মালিকরা এও বলছেন, অবিরাম বৃষ্টিতে আম বাগানের পরিচর্যা করতে না পারায় আমের শরীরে কালো দাগ পড়েছে। এ কারণে আকৃষ্ট হচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। গেল বছর এই সময়ে যে বাগান ৪ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে এবার সেই বাগান বেচতে হচ্ছে ২ লাখ টাকায়। লকডাউন আর করোনা ভাইরাসের অজুহাতে ঢাকায় আম পাঠাতেও ট্রাক প্রতি গুনতে হচ্ছে ৭ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া।
পীরগঞ্জ উপজেলা আম বাগান মালিক সমিতির সভাপতি আবু জাহেদ ইবনুল ইকরাম জুয়েল বলেন, আমের পরাগায়নের সময় বৃষ্টিতে কিছু মুকুল নষ্ট হয়ে পরে, এখন অবশিষ্ট মুকুলের আম অতি বর্ষণে নষ্ট হতে বসেছে, সব মিলিয়ে বাগানীরা আমরা বেশ ক্ষতির মুখেই আছি। আমে বালাই নাশক স্প্রে করা হয়, কিন্তু মানসম্মত বালাই নাশক পরিমাপক যন্ত্র কৃষি বিভাগে নেই। এই যন্ত্রের ব্যবস্থা থাকলে আমরা মান সম্মত বলাইনাশক ব্যবহার করে উপকৃত হবো বলেও জানান তিনি।
চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচ উপজেলায় ২ হাজার ৮শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে সূর্যাপুরী, মিশ্রিভোগ, হাড়িভাঙ্গা, বান্দিগৌরি, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। এ থেকে ৪৩ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন আমের ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কুশলডাঙ্গী গ্রামের আম চাষি অসিম হায়াত পাঞ্জাব বলেন, অতি বর্ষণে ঘর থেকে বের হওয়া যায়নি। তাই এবার আম বাগানের পরিচর্যা করা যায়নি। ফলে আমে কালো দাগ পরেছে।
ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গতবছর ঢাকায় আম পাঠাতে খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এবার তা বেড়ে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, এবার আমের ভাল ফলন হয়েছে। বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি ও পরিবহন ব্যবস্থা ভাল হলে চাষিরা আমের দাম ভাল পাবে বলে আশা করা যায়। তবে অতি বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতায় কিছু আমের ক্ষেতে পানি জমেছে। বৃষ্টিপাত না হলে দ্রুত পানি সরে যাবে বলে জানান তিনি।