খবর৭১ঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, কুয়েতে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে, এমপি হিসেবে নয়। সেখানে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে দেশেও তদন্ত করা হবে। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি একথা বলেন।
গত ৬ জুন মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে সংসদ সদস্য পাপুলকে গ্রেফতার করে কুয়েতের সিআইডির সদস্যরা। আটক করা হয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও তার ঘনিষ্ঠ মূর্তজা মামুনকে। পাপুলের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে কর্মী নিয়োগ, রেসিডেন্সি আইনের লঙ্ঘন ও ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের কথা রয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তার পাঁচ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে বলে কুয়েতের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে কুয়েতের ইতিহাসে বৃহত্তম মানবপাচারের ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এমপি পাপুলকে গ্রেফতারের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, পাপুল একজন ব্যবসায়ী হিসেবে কুয়েতে গিয়েছিলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে নয়। এমনকি তিনি কুয়েতে সরকারি পাসপোর্টও নিয়ে যাননি। সেখানে তিনি ২৯ বছর ধরে ব্যবসা করেন, তিনি সেদেশের নাগরিক হিসেবে গিয়েছেন। আমরা তার বিষয়ে জানতে কুয়েত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে কিছুই জানায়নি কুয়েত সরকার।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে তাকে গ্রেফতারের তথ্য জানার পর, আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বললাম, এটা সম্পর্কে আপনি সঠিক তথ্য নিয়ে আসেন, তার বিরুদ্ধে কি চার্জ করা হয়েছে সে বিষয়ে সেদেশের বক্তব্যটা নিয়ে আসেন। তারা এখনো কোনো চার্জও করেনি। কুয়েত সরকারের কাছ থেকে তথ্য না আসার জন্য লকডাউনকে কারণ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ওখানে লকডাউন এবং অফিস-আদালত মোটামুটি বন্ধ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসে লোক পাওয়া যায় না।
ড. মোমেন বলেন, বিদেশে একজন এমপির বিরুদ্ধে মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগ এসেছে, এটা খুবই দুঃখজনক। অথচ আমরা মানবপাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। আমরা বলতে চাই, সরকার মানবপাচার ও অর্থপাচারে কোনো ছাড় দেবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়েছেন। পাপুলের বিষয়ে কুয়েত সরকার থেকে কোনো অভিযোগ এলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করবো। আমরা মানবপাচার, অর্থপাচার এইগুলোতে কোনো ছাড় দেব না। তবে বাংলাদেশের সব নাগরিককে আমরা সমান হিসেবে দেখি। আমরা এক্ষেত্রে একটা নির্দেশনা দিয়েছি, উনি বা উনার সঙ্গীরা যদি আমাদের কনস্যুলার সেবা চায়, তাহলে আমরা অবশ্যই দিব। এটা স্ট্যান্ডিং অর্ডার, সবার ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য।
অন্যদিকে পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে মানব পাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগ ওঠার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছেন কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম। এমনকি তিনি পাপুলের পক্ষে সাফাই গেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। রাষ্ট্রদূতদের এমন অভিযোগের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এই অভিযোগও খতিয়ে দেখব।
তিনি বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কালামের মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ মাসেই উনি চলে আসবেন। নতুন রাষ্ট্রদূত কে হবেন, সেটাও আমরা নির্ধারণ করেছি। ২০১৬ সালের ব্যবসায়ী ও চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালামকে চুক্তিতে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি কালাম চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতিও ছিলেন।