ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ করোনা আতঙ্কের মধ্যে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচলের বাঁধা সৃষ্টির প্রতিবাদ করায় প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন গৃহবধু রানী বেগম (৪৫), স্বামী আব্দুল হামিদ (৫০) ও ছেলে আবু সিদ্দিক (২২)। প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর জখম হয়ে এখন জীবন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন রানী বেগম।
ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ৯ নং রায়পুর ইউনিয়নের ছেপড়ীকুড়া গ্রামে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছেপড়ীকুড়া গ্রামের বাসিন্দা হালিম উদ্দীনের ছেলে জসিম উদ্দীন ক্রয়কৃত তার নিজ জমির রাস্তা দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে যাতায়াত করতো কিন্তু হঠাৎ করে গত ২৩/০৬/২০২০ তারিখে একই গ্রামের বাসিন্দা মৃত পিয়ার আলীর ছেলে জমিরুল ইসলাম (৩৫) রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। বিষয়টি জসিমউদ্দীন দেখলে এর প্রতিবাদ করলে এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় জমিরুল রাস্তা নিজের দাবি করে পরিবারের বাকি সদস্য ভাই জাকিরুল (২৫), আব্দুল কাদের (৫৫) ও জমিরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা আকতার (৩০) কে সাথে নিয়ে জসিম উদ্দীনের ছেলে মুন্না আলীর উপর হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হন মুন্না আলী। ঘটনাটি জসিম উদ্দীনের ভাই শুনলে ঘটনাস্থলে এসে মুন্নাকে উদ্ধার করে বাড়ীতে নিয়ে যায়। এ ঘটনার জেরে জসিম উদ্দীনের ভাতিজা আবু সিদ্দিক নিজ বাড়ীর সামনে ফুটানি বাজারে দাঁড়িয়ে থাকলে তাকে দেখে বিবাদি জমিরুল ইসলামের ছোট ভাই জাকিরুল ইসলাম (২৫) অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় আবু সিদ্দিক প্রতিবাদ করতে গেলে জাকিরুল উল্টো তাকে ধরে মারধর করে। পরে জাকিরুল তার ভাই জমিরুলকে জানালে জমিরুল নিজ বাড়ী থেকে ধারালো ছুরি নিয়ে এসে আবু সিদ্দিকের উপর হামলা চালায়। এ সময় বাদি জসিম উদ্দীনের ভাই আব্দুল হামিদ ও তার স্ত্রী রানী ঘটনা স্থলে সন্তান সিদ্দিককে বাঁচাতে গেলে জমিরুল এলোপাতাড়ি ছুরি দিয়ে আব্দুল হামিদ ও স্ত্রী রানী বেগমকে কোপাতে থাকে এবং জমিরুল ইসলাম ছুরিটি চারপাশে ঘুরাতে থাকে। ঘটনাটি দৃশ্যমাণ হওয়ায় বাজারে লোকজন সবাই একত্রিত হয়ে জমিরুলকে ধাওয়া দেয়। এ সময় স্থানীয়রা গুরুতর আহত আব্দুল হামিদ ও স্ত্রী রানীকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, গত ২৩ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টার সময় জমিরুল ছুরি নিয়ে বাজারের মধ্যে এসে সিদ্দিক ও তার বাবা হামিদের উপর হামলা চালায়। এ সময় আব্দুল হামিদের স্ত্রী আসলে তাকে ছুরি দিয়ে কোপাতে থাকে। আমরা সবাই ভয় খেয়ে গেছিলাম। এক পর্যায়ে বাজারের সবাই একত্রিত হয় তাকে ধাওয়া দেই।
অভিযোগের বিষয়ে বিবাদী জমিরুল ইসলাম জানান, আমার পুকুরের পানি যাওয়া তারা বন্ধ করে দেয়। সে জন্য আমি রাস্তা বন্ধ করে দেই। তাদের উপর কোন হামলা করা হয়নি কিন্ত তিনি ছুরি নিয়ে বাজারের যাওয়ার কথাটি স্বীকার করেন।
এ ঘটনায় জসিম উদ্দীন বাদি হয়ে গত ২৪/০৬/২০২০ ইং তারিখে ন্যায়বিচার ও হামলাকারীদের শাস্তি দাবিতে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। কিন্তু ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও আসামিরা ধরাছোয়ার বাইরে।
বাদি জসিম উদ্দীন জানান, আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মামলা তুলে নিতে বলা হচ্ছে। ঘটনার ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা গরীব মানুষ হওয়ায় ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। মাননীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে আবেদন, আমাদের সন্ত্রাস বাহিনীদের হাত থেকে রক্ষা করুন।
মামলার তদন্তে থাকা এস,আই পিযুস জানান, রায়পুরের ছেপড়ীকুড়া গ্রামে মারামারির যে ঘটনা ঘটেছে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানা অফিসার ইনচার্জ তানভীরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্তে সাপেক্ষে অতি শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।