খবর৭১ঃ করোনা ভাইরাস শুধু শ্বাসতন্ত্রকে ক্ষতি করছে তা নয়, বরং মানুষের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রে বহু রকমের সমস্যা সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে রয়েছে স্ট্রোক, মানসিক বিকার, প্রলাপ, বিভ্রম, ক্লান্তি ও দুশ্চিন্তা।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, করোনা ভাইরাসজনিত নিউরোলজিক্যাল সমস্যার এই তালিকা শেষ হচ্ছে না। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেওয়া হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণে যাদের উপসর্গ তুলনামূলকভাবে মৃদু ছিলো, তাদের অনেকে অভিযোগ করছেন, তারা অনেক কিছু মনে রাখতে পারছেন না। কেউ আবার মানসিক অবসাদ বোধ করছেন। অনেকে আবার কোন কিছুতে আগের মতো মনঃসংযোগ করতে পারছেন না।
আর যারা স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন, তাদের পরীক্ষা করে ডাক্তাররা যা দেখেছেন তা রীতিমত ভীতিকর।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর দু’বার স্ট্রোক করেছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ সংক্রান্ত পরিচালক পল মিলরি। স্ট্রোকের পর তার চিকিৎসা করেছিলেন কনসালট্যান্ট নিউরোলজিস্ট ডা. অরবিন্দ চন্দ্রদেবা।
তিনি বলেন, ‘তিনি যখন বাড়ি ফিরতে হাসপাতাল থেকে বেরুবেন ঠিক তখন পলকে নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সটি আসে। পলের মুখে তখন একটা ভাবলেশহীন অভিব্যক্তি ছিলো। তিনি শুধু এক পাশে দেখতে পাচ্ছিলেন। তিনি কিভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হয়, বা তার পাসকোড কি এসব মনে করতে পারছিলেন না।’
ডা. চন্দ্রদেবা বলেন, ‘করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় তার শরীরে এমন একটা কিছু হয়। যাতে তার রক্ত জমে আঠালো হয়ে গিয়েছিলো। আমি কখনো এমন দেখিনি।’
এই চিকিৎসক আরো বলেন, ‘রক্ত জমাট বাঁধার পরিমাণ মাপার একটা সূচক আছে। যাকে বলা হয় ডি-ডাইমার। সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে এটা হয় ৩০০- এর কম। কিন্তু স্ট্রোকের রোগীদের ক্ষেত্রে তা ১০০০-এ উঠে যায়। কিন্তু পল মিলরির ক্ষেত্রে এটা ৮০,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যা প্রায় অবিশ্বাস্য।’
ডাক্তাররা ভেবেছিলেন ৬৪ বছর বয়স্ক পল মিলরি স্ট্রোকের পর হয়তো বাঁচবেন না, বা পঙ্গু হয়ে যাবেন। তার স্ত্রী ও মেয়েরাও তাই ভেবেছিলেন। কিন্তু তিনি সেরে উঠেছেন। তবে তিনি আগের মত দ্রুতগতিতে পড়তে পারেন না। কখনো কখনো তিনি নানা জিনিস ভুলে যাচ্ছেন।
ড. চন্দ্রদেবার হাসপাতাল এনএইচএনএন-এ দুই সপ্তাহের মধ্যে ছয়জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত লোককে ভর্তি করা হয়। যাদের স্ট্রোক হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের দেহে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল।
দি ল্যান্সেট সাইকিয়াট্রির এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ১২৫ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে মস্তিষ্কের জটিলতা দেখা গেছে।
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টম সলোমন বলছেন, ‘আগে আমরা ভাবতাম করোনা ভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করে। কিন্তু এখন এটা স্পষ্ট যে, মস্তিষ্কেও সমস্যা সৃষ্টি করে। এর একটা কারণ মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যাওয়া।’
এনএইচএনএন হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট মাইকেল জান্ডি বলছেন, ‘এর আগে সার্স ও মার্স ভাইরাসের সঙ্গেও স্নায়ুতন্ত্রের রোগের সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে যা দেখছি তা আগে কখনো দেখিনি।’