খবর৭১ঃ
দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার তিন মাসের মাথায় এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেল, সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডও সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৪৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৭৫ জন। এই এক দিনে আরো ৩ হাজার ১৭১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৬৭৫ জন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, সামনে আরো ভয়ংকর দিন আসছে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, করোনা শনাক্তকরণে পরীক্ষা যত বেশি হবে, আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত তত বেশি হবে। এখনই হাসপাতালগুলোতে বেড পাওয়া যাচ্ছে না, সামনে কী হবে বলা মুশকিল। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে যাবেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সামনে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে। তাই চিকিৎসা সম্প্রসারণের কার্যক্রম চলছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. খান মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, সামনে করোনার পরীক্ষা যত বেশি হবে, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও তত বাড়বে। বর্তমানে যে অবস্থায় যাচ্ছে, সামনে আরো বেশি সংক্রমিত হবে এবং আরো বেশি মানুষের মৃত্যু হবে। দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অক্সিমিটারের মাধ্যমে অক্সিজেনের মাত্রা নিয়মিত পরিমাপ করতে হবে। ৯৫-এর নিচে এলেই হাসপাতালে চলে আসবেন অক্সিজেন নেওয়ার জন্য। এছাড়া জ্বর, গলাব্যথা, পা ফোলাসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিলে কিংবা কোনো ধরনের অস্বস্তি অনুভব করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডা. খান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে ডাক্তাররা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। চিকিত্সকেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। অভিজ্ঞ জনবলেরও অভাব। পুরো সমাজ এখন বিপর্যস্ত। বাঁচার একটাই উপায়, ঘরে থাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা গতকাল মঙ্গলবার দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরে বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন আরো ৭৭৭ জন। সব মিলে এ পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ৩৩৬ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ, এর ১০ দিনের মাথায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। এরপর গত ২ জুন ২ হাজার ৯১১ জন নতুন রোগী শনাক্তের তথ্য দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা এতদিন এক দিনের সর্বোচ্চ ছিল। আর রবি ও সোমবার ৪২ জন করে মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়েছিল বুলেটিনে, মঙ্গলবার সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেল। অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ, ১২ জন নারী। তাদের মধ্যে ২৮ জন ঢাকা বিভাগের, ১১ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুই জন সিলেট বিভাগের, দুই জন রাজশাহী বিভাগের ও দুই জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা। এই ৪৫ জনের মধ্যে ইট জনের বয়স ছিল ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। এছাড়া ১০ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ১৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, তিন জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, পাঁচ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, দুই জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং বাকি দুই জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। অর্থাত্, করোনায় বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪৫ মৃত্যুর মধ্যে ৩৩ জনের বয়স ৫১ বছরের বেশি।