যুক্তরাষ্ট্রে শহরে শহরে কারফিউ ভেঙে চলছে বিক্ষোভ

0
488
যুক্তরাষ্ট্রে শহরে শহরে কারফিউ ভেঙে চলছে বিক্ষোভ

খবর৭১ঃ
শেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে শহরে শহরে চলছে বিক্ষোভ। কারফিউ ভেঙে সড়কে নেমে এসেছেন আন্দোলনকারীরা।

রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি,নিউইয়র্ক সিটি ও টেক্সাসের ফোর্ট ওর্থসহ বহু জায়গায় কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভকারীদের রাস্তায় নেমে আসতে দেখা গেছে।অন্তত ৪০টি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। এই কারফিউ কেউ মানছেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিসে গত সপ্তাহে শেতাঙ্গ পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডে নামে একজন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন।এর প্রতিবাদে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।পরিস্থিতি মোকাবেলায় কারফিউ জারি করা হয়েচে। তা উপেক্ষা করে জনগণ বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।

এ ঘটনায় দেশটিতে এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস পুলিশের প্রধান ডেভিড ডর্নকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, লুটপাটকারীরা ডর্নকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে।

এদিকে বিক্ষোভের ফলে দেশটিতে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর, শহরের মেয়র এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মকর্তারা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

কোনো কোনো রাজ্যে বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না এবং মাস্কও পরছেন না। আবার অনেকে মাস্ক পরলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটবে না এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। উপসর্গ নেই এমন বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকেই ভাইরাস অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে এক লাখ আট হাজার ৫৯ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৮ লাখ ৮১ হাজার ২০৫ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছে ছয় লাখ ৪৫ হাজার ৯৭৪ জন।

এদিকে মিনেসোটা রাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে পুলিশের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। ফ্লয়েডের মৃত্যুর এক সপ্তাহের মাথায় আসা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, সেটা ‘হত্যাকাণ্ড’।

তাকে ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড ধরে চেপে রাখা হয়। এভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

পথচারীদের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এবং দাফতরিক নথি পর্যালোচনা করার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ওই সময়ের ঘটনাগুলো জোড়া দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

এতে দেখানো হয়েছে,ঘাড়ে চাপা দেয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক কাকুতি-মিনতি করেছিলেন ফ্লয়েড। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে সাহায্য করার অনুরোধ জানালেও পুলিশ তাতে সাড়া দেয়নি।

ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরদিন মঙ্গলবার ওই ঘটনায় জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে পুলিশ বিভাগ।

এরপর শুক্রবার হেনেপিন কাউন্টি অ্যাটর্নি মাইক ফ্রিম্যান বরখাস্ত পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনেন।

বিভিন্ন ভিডিওতে সবচেয়ে পরিষ্কারভাবে এই শভিনকেই ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু তুলে দিয়ে রাস্তার সঙ্গে চেপে ধরে রাখতে দেখা যায়।

তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, শ্বেতাঙ্গ ওই পুলিশ সদস্য ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড ধরে চেপে রেখেছিলেন।

ভিডিওতে দেখা গেছে, ফ্লয়েড অচেতন হয়ে যাওয়ার পরও শভিন তার হাঁটু সরাননি। চিকিৎসাকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসার পরও পুরো এক মিনিট ধরে ফ্লয়েডের ঘাড় চেপে ধরে রেখেছিলেন তিনি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত ২৫ মে। মিনিয়াপোলিসের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায়।

এক খাবারের দোকানের কর্মচারী ৯১১ এ কল করে অভিযোগ করেন, এক ক্রেতা সিগারেট কেনার পর ২০ ডলারের জাল নোট দিয়েছে। পুলিশ এসে ওই অভিযোগে ৪৬ বছর বয়সী ক্রেতা জর্জ ফ্লয়েডকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ এসে তাকে ঘিরে ধরে।তার ওপর নিপীড়ন শুরু করে।ঘটনাস্থলে পুলিশের গাড়ি আসার ৭২ মিনিট পর রাস্তায় তিন পুলিশের নিচে চাপা পড়ে থাকা ফ্লয়েড অচেতন হয়ে ছিলেন, তার মধ্যে প্রাণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here