খবর৭১ঃ
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা ভালো নেই। অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার আবার কেউ চাকরি থেকেও ঘরবন্দী জীবন যাপক করছেন। যারা ছোট ব্যবসা করেন তাদেরও আয় কোন নেই। ফলে প্রতি মাসেই স্বজনদের কাছে অর্থ কম পাঠাচ্ছেন। প্রতিবছর ঈদের সময় রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসীরা। তবে দুর্যোগের কারণে রেকর্ড পরিমাণ না বাড়লেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে।
চলতি মে মাসের ১৯ দিনে দেশে ১০৯ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১০৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্থানীয় মুদ্রায় ১ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। আগের বছরের মে মাসে টাকার অঙ্কে রেমিট্যান্স পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যদিও আগে বছরের কোন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছিল না। যার ফলে গত অর্থবছরে মে মাসে ঈদের আগে ১৭৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে প্রবাসী থাকা বেশিরভাগ দেশে লকডাউন অবস্থা চলছে। এর ফলে প্রবাসী অনেকের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, আবার অনেকে দেশে ফিরে এসেছেন। এই দুর্যোগের মধ্যেও ঈদ উপলক্ষে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। আবার যারা দেশে চলে আসছেন, তারাও টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কারণ, বহন করে বেশি টাকা আনা যায় না। এ জন্য আয় বেড়েছে। সামনের দিনে প্রবাসী আয় পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, ঈদের আগে ধার করে হলেও প্রবাসীরা টাকা পাঠিয়ে থাকেন। আবার যারা চলে আসবেন, তারা সঞ্চয় ভেঙে ফেলছেন। এসব টাকায় দেশে আসছে। জুনে মাসে গিয়ে প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে। প্রবাসী আয় অনেক কমে যাবে।
জানা গেছে, যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসে, সেসব দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রেমিট্যান্স হাউস ও ব্যাংকগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশি শ্রমিকেরাও পড়েছেন বিপদের মুখে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের থাকা শ্রমিকেরা। দেশের প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষ ১৫টি উৎস দেশ হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, ইতালি, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও জর্ডান। সম্প্রতি কিছু দেশে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে।
ব্যাংকিং চ্যানেল বা বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। সে অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এতে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে গিয়েছিল।
এদিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বাজেট সহায়তা হিসেবে ২৫ কোটি ডলার বাংলাদেশকে দিয়েছে। প্রবাসী আয় ও বাজেট সহায়তার টাকা আসায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফের বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এশিয়ার ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের রিজার্ভ ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারে নেমে আসে। তবে আমদানি দায় শোধ করতে অনেক ব্যাংকে এখনো ডলারের সংকট রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গতকালও ১ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এতে চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ৮২ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এই ডলারের বেশির ভাগ কিনছে সরকারি ব্যাংকগুলো। সরকারি বড় বড় প্রকল্পের আমদানি বিল পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে তারা ডলার কিনছে বলে জানা গেছে।