খবর৭১ঃ সারাদেশে করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ হত দরিদ্র পরিবারের মাঝে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মোবাইল ব্যাংকিং পরিসেবার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের হিসাবে সরাসরি নগদ অর্থ বিতরণের উদ্বোধন করেন তিনি। এতে প্রত্যেক পরিবার এককালীন ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবে। এই বিতরণ চলবে আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত। এছাড়াও স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ২০১৯ সালের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের কোনো শক্তিধর দেশই এই করোনা ভাইরাসকে জয় করতে পারে নি। এই ভাইরাসের প্রভাবে যখন বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলছে, বিশ্ব যখন স্থবির তখন প্রকৃতি পুনঃ উজ্জীবিত হয়ে উঠছে নিজের মতো করে।
জীবন তো থেমে থাকতে পারে না। সে জন্য আমরা কিছু কিছু করে পুনরায় চালু করে দিচ্ছি। আজকে আমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের বলবো, আপনাদের আশেপাশে কেউ দরিদ্র থাকলে তাদের সহায়তা করুন।
৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে অর্থ সহায়তা বিতরণের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী আমি ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি, আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। আমাদের নিজেদের খাদ্য উৎপাদনে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। দেশে খাদ্য ঘাটতি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রায় ৫০ লাখ পরিবারের প্রায় ২ কোটি সদস্য আগে থেকেই রয়েছে ভিজিএফ কার্ডের আওতায়। তারা এখন এই কার্ডের মাধ্যমে ১০ টাকায় চাল কিনতে পারছেন। এছাড়াও রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা।
এর বাইরে যারা দৈননন্দিন কাজ করে খেতো, তাদের কোনো কাজ নেই, তাদের আয়ের পথ বন্ধ। তাদের কথা চিন্তা করেই আমরা কিছু অর্থের ব্যবস্থা করেছি। সেই লক্ষ্যেই ৫০ লাখ মানুষকে আমরা অর্থ সহায়তা দিবো। যারা কিছুই পাচ্ছেন না, যারা সব রকম ভাতা ও সুবিধার বাইরে, তাদের কথা চিন্তা করে আমরা ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছি। একদিকে মুজিববর্ষ, অন্যদিকে রমজান মাস, সামনে ঈদ আসছে, সে কথা চিন্তা করেই আমরা তাদের মোবাই ফোনে এই অর্থ দিয়ে দিবো।
এর আগে, এ বিষয়ে বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভ্রাম্যমাণ আর্থিক সেবার মাধ্যমে ‘কোভিড-১৯’এর প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ২ হাজার ৫শ’ টাকা করে বিতরণ উদ্বোধন করবেন। বিকাশ, রকেট, নগদ ও সিওর ক্যাশের মতো মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকার তহবিল বিতরণ করা হবে। প্রতি পরিবারে ধরা হয়েছে চারজন সদস্য, সেই হিসাবে এই নগদ সহায়তায় উপকার-ভোগী হবে ২ কোটি মানুষ। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষক, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এই তালিকা তৈরি করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ভাতা পাওয়ার তালিকায় আছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ-শ্রমিক, কৃষক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষ। তালিকাভুক্তদের মধ্যে নগদ, বিকাশ, রকেট, এবং শিউরক্যাশ এর মাধ্যমে সরাসরি চলে যাবে এই টাকা, ফলে বাড়তি কোন ঝামেলা পোহাতে হবে না তাদের। টাকা পাঠানোর খরচ সরকার বহন করবে। এই টাকা উত্তোলন করতে ভাতা-ভোগীদের কোন খরচ দিতে হবে না। এই ৫০ লাখ পরিবারের বাইরে আরো ৫০ লাখ পরিবারের প্রায় ২ কোটি সদস্য আগে থেকেই রয়েছে ভিজিএফ কার্ডের আওতায়। এছাড়াও রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা।
ডা. মো. এনামুর রহমান জানান, প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষ নগদ সহায়তা পাবেন এবং পুরো তহবিল ১৪ থেকে ১৮ মে’র মধ্যে বিতরণ করা হবে। এখন সরকারের ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে এমন ১ কোটি ২৫ লাখ পরিবারের মধ্যে দরিদ্রতম ৫০ লাখ পরিবারের সমন্বয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
এর আগে, সোমবার, সরকারের অর্থ বিভাগ ৫০ লাখ মানুষকে নগদ সহায়তার জন্য ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকার তহবিল ছাড় করে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জন্য বাজেট-১ শাখা থেকে ৬২৭ কোটি টাকা এবং বাজেট-৩ শাখা থেকে ৬৩০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বিতরণ কার্যক্রম তদারকি করছে।
উল্লেখ্য, দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ কোটি মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে সরকার। আর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, দলীয় সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা দলের পক্ষে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৯০ লাখ ২৫ হাজার ৩২৭ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ৮ কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে।