খবর৭১ঃ করোনা ভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচার কার্যক্রম স্থগিত রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছেন উভয় বিভাগের বিচারপতিরা। বিচারপতিরা বলেছেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে স্বল্প পরিসরে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করাটাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিচারক, আইনজীবী ও বিচার প্রার্থী জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে আদালত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকাটাই হবে যুক্তিযুক্ত। এ বিষয়ে ৮৮ জন বিচারপতির মতামত গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সুপ্রিম কোর্ট খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা আগামী ৫ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অনুরোধের পাশাপাশি ১৪ জন আইনজীবীর চিঠির প্রেক্ষিতে স্বল্প পরিসরে কোর্ট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে খুশি নন এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হন আইনজীবীরা। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত আবারো বিবেচনার জন্য প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানান তারা। পরে প্রধান বিচারপতি কোর্ট খোলার রাখার আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে ফুল কোর্ট সভা ডাকেন।
আজ রবিবার অনুষ্ঠিত ওই ফুল কোর্ট সভায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের ৮৮ জন বিচারপতি নিজেদের বাসা থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অংশ নিয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। সভার শুরুতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোর্ট খোলা রাখা নিয়ে আইনজীবীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আইনজীবীদের একটি অংশ খোলা রাখার পক্ষে মত দিলেও আরেকটি অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর বিরোধিতা করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে আদালত খোলা রাখা বা না রাখার বিষয়ে আপনারা যে মতামত বা দেবেন সেটাই আমি গ্রহণ করব। আমি নিজে কোন একক সিদ্ধান্ত দিয়ে আদালত খোলা রাখার পক্ষে নই। এরপরই বিচারপতিরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতিকে বলেছেন, করোনা ভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে স্বল্প পরিসরে কোর্ট চালু রাখা হয়েছে। আমাদের বিচার ব্যবস্থায় সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কোর্ট খোলা রেখে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনগত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে মর্মে কয়েকজন বিচারপতি জানান। সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কোর্ট চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফুল কোর্ট। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে রাষ্ট্রপতিকে একটি অধ্যাদেশ জারির অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি এ বিষয়ে হাইকোর্ট রুলস সংশোধন করতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বিচারক ও আইনজীবীদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবেন সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল রিফর্মস সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি। প্রশিক্ষণের অগ্রগতির বিষয়টি প্রধান বিচারপতিকে সময়ে সময়ে অবহিত করবে ওই বিশেষ কমিটি।