খবর৭১ঃ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বেনাপোলে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সংখ্যালঘু পরিবারের উপর তান্ডব চালানোয় বাবু সরদার(৩৮) নামের এক লম্পটকে গণধোলাই দিয়ে দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। মঙ্গলবার গভীর রাতে (১২টার পর) বেনাপোলের ছোটআঁচড়া গ্রামের হিন্দু পল্লীর রবিনের স্ত্রী রীতা সরকার টয়লেটে গিয়ে বের হওয়ার সময় আগে থেকে ওৎপেতে থাকা বাবু সরদার তার শাড়ির আঁচল টেনে ধরে।
পরে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তান্ডবলীলা চালালে তাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয় জনতা। পরে পোর্ট থানা পুলিশ এসে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বাবু সরদারের লালসার হামলায় রক্তাক্ত জখম রিতা সরকার শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এসময় বেনাপোলের ছোট আঁচড়া গ্রামের অভিযোগকারি সংখ্যালঘু রবিন সরকার নাপিত বলেন, তার স্ত্রী বুধবার গভীর রাতে ঘরের বাইরে থাকা টয়লেটে যায়। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় আগে থেকে ওৎপেতে থাকা গ্রামের দুধর্ষ আতঙ্ক বাবু সরদার তার শাড়ির আঁচল টেনে ধরে। পরে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আমার স্ত্রী চিৎকার করলে আমি ঘর থেকে ছুটে আসি। এসময় বাবু সরদার ক্ষমতার বলে তার হাতে থাকা বিদেশী লাইট দিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে।
যা সহ্য করতে না পেরে আমার স্ত্রী ঠেকাতে গেলে সে তার হাতের লাইট দিয়ে আমার স্ত্রীর মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। আমাদের চিৎকারে প্রতিবেশী ছোটআঁচড়া ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শান্তিপদ গাঙ্গুলী ছুটে এসে প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করে বাবু সরদার। এসময় গ্রামের লোকজন এসে তাকে গণপিটুনি দিয়ে পোর্ট থানা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ বিষয়ে ছোটআঁচড়া ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শান্তিপদ গাঙ্গুলী বলেন গতকাল গভীর রাতে চিৎকারের শব্দ শুনে আমরা ঘর থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসি।
এসময় বাবু সরদার আমার আসাতে সন্তোষ্ট হতে না পেরে তার হাতের থাকা লাইট দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি মারে। যা সহ্য করতে না পেরে চিৎকারের শব্দে ছুটে আসা গ্রামবাসীরা মিলে তাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে বাবু সরদারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, পরে জানতে পেরেছি বাবু সরদার নামের উক্ত সন্ত্রাসী রবিন সরকারের স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এ তান্ডবলীলা চালিয়েছে। এ বিষয়ে বাবু সরদারের লালসার সিকার রীতা সরকার বলেন, গতকাল রাত্রে আমি টয়লেটে যাওয়ার পরে বের হয়ে আসার সময় বাবু সরদার খারাপ কাজের উদ্দ্যেশ্য আমাকে কাপড় ধরে টানা টানি করে। এসময় আমি চিৎকার করলে আমার স্বামী ঘর থেকে বের হয়ে দেখে বাবু সরদার আমাকে ধরে ধস্তাধস্তি করছে। এসময় আমার স্বামী আমাকে ছোটানোর জন্য চেষ্টা করলে লম্পট বাবু সরদার তার কাছে থাকা তিন ব্যাটারি লাইট দিয়ে আমার স্বামীকে মারধর করতে থাকে। আমি ঠেকানোর চেষ্টা করলে সে স্বজোরে আমার মাথার উপর লাইট দিয়ে বাড়ি মারে। এ সময় তিনি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করেন। এ বিষয়ে ছোটআঁচড়া গ্রামের মোহনের স্ত্রী শীলা রাণী বলেন, হিন্দু বলে আমরা কি মানুষ না? বাবু সরদার প্রায়ই আমাদের হিন্দু পল্লীর বউ-মেয়েদের উপর অমানষিক নির্যাতন করার চেষ্টা করে।
সে খুবই খারাপ প্রকৃতির মানুষ হওয়ায় তার ভয়ে আমরা সবাই খুব আতঙ্কে থাকি। এ বিষয়ে প্রতিবেশী শওকতের স্ত্রী বলেন. মঙ্গলবার গভীর রাতে আমরা রবিনের স্ত্রী রীতা সরকাররের চিৎকারে বাহিরে বেরিয়ে আসি। পরে উক্ত জঘন্নতম ঘটনার প্রতিবাদ করায় বাবু সরদারের স্ত্রী আমাদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। বলেছে আমার স্বামী বাড়ী আসলে তোমাদের দেখে নেওয়া হবে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনাপোল পৌরসভার ছোটআঁচড়া গ্রামের জনৈক বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন যাবত বাবু সরদার গ্রামের মানুষদের জিম্মি করে চাঁদাবাজি, লুটতরাজ ও পরের বউ নিয়ে টানাটানি করে আসছে। কেউ অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে ধরে নিয়ে তার নিজস্ব বিচারালয়ে নিয়ে চালায় অমানুষিক নির্যাতন। উপরি মহলে তার লম্বা হাত থাকায় কেউই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহসটি পর্যন্ত পায়না। গত সপ্তাহের মধ্যেও সে গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদার দাবিতে তাকে মারধর পর্যন্ত করে। যা নিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় শালিশ বিচার পর্যন্ত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এভাবে প্রতিনিয়ত বাবু সরদারের হাতে পাঠার বলি হতে হচ্ছে গ্রামের জনসাধারণের। এ বিষয়ে গ্রামের মানুষের কাছে শুনলে পাওয়া যাবে তার সকল অপকর্মের ফিরিস্তি। এছাড়া মাঝেমধ্যে সে পুলিশের হাতে আটক হলেও উপরি মহলে লম্বা হাতের কারণে বেশিদিন থাকতে হয়না শ্রীঘরে। যেকারণে দিনের পর দিন সে বে-পরোয়া থেকে বে-পরোয়া হয়ে উঠছে। যার লাগাম কোনভাবেই রোধ করা সম্ভব বলে মনে হচ্ছেনা।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মামুন খান বলেন, গতকাল রাতে আমরা খবর পেয়েছি বাবু সরদার নামে এক ব্যক্তি জনৈক নারীকে শ্লীতাহানির চেষ্টা করে দু’জনের মারধর করেছে। যা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে আমরা অভিযুক্ত বাবু সরদারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে যশোর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।