খবর৭১ঃ বাজারে হুট করে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে ২০০ টাকা কেজির পেঁয়াজের দাম কমতে কমতে যখন ৩৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে এসেছে, ক্রেতারাও একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন। এ সময় আবার ঝাঁজ ছড়াতে শুরু করেছে পেঁয়াজ। তিন দিনে ধাঁ ধাঁ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এ পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে চিত্তচাঞ্চল্যে দুলছে মানুষ। খাদ্যসংকটের দুর্ভাবনায় চলছে নিত্যপণ্য মজুত। এরই ধারায় ক্রেতাসাধারণের পেঁয়াজ কেনাও গেছে বেড়ে। অথচ পেঁয়াজের সরবরাহে এখন কোনা ঘাটতি নেই। বাজারে দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ আসছে, ভারত থেকেও চলছে আমদানি। উৎপাদিত পেঁয়াজের বড় অংশ এখন ব্যবসায়ীদের গুদামে। সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য যা যথেষ্ট। এরপরও ব্যবসায়ীরা তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছেন। ৩৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। শুধু পেঁয়াজ নয়, দাম বেড়েছে রসুনেরও। প্রতি কেজি রসুন ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে আজ শনিবার সকাল ছয়টা থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর পেঁয়াজের আড়তে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। এতে ওই বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় নেমে এসেছে। রসুনের দামও ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। তবে রাজধানীর বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার ও মিরপুর এক নম্বর কাঁচাবাজার এবং অন্যান্য খুচরো বাজারে পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর সব কটি সুপার স্টোর ও মুদি দোকানেও পেঁয়াজের কেজি একই দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আজ সকাল ছয়টা থেকে যাত্রাবাড়ীর পেঁয়াজের আড়তে চলা র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সকাল নয়টার মধ্যে একজন ব্যবসায়ীকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীকে র্যাব থেকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে র্যাব। ৬৫ টাকা কেজি দরে তাঁরা যে পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন, তা কত টাকায় কেনা হয়েছে, সেই কাগজ দেখাতে বললে ওই ব্যবসায়ীরা তা দেখাতে পারেননি।
এ ব্যাপারে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘আমরা একে একে সব বাজারে অভিযান চালাব। যারাই বর্তমান পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
করোনা নিয়ে বাজারে আতঙ্ক তৈরি হওয়ার পর গত বুধবার থেকে বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যেতে থাকে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের মধ্যে দাম এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যায়। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ‘দেশে যথেষ্ট খাদ্যপণ্যের মজুত আছে এবং আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’—এমন বক্তব্য দেওয়া হলেও তা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না; বরং প্রতিদিনই বেশির ভাগ পণ্যের দাম টানা বেড়েই যাচ্ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) থেকে দেশের বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের মূল্য পর্যবেক্ষণ করা হয়। সংস্থাটির গতকালের হিসাব অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জে পেঁয়াজ মজুত ও অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করায় জেলার দুই উপজেলায় অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাঁরা নয়টি দোকানে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই দিনে কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির অভিযোগে তিন ব্যবসায়ীকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল শুক্রবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত ৬ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। করোনার কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না। আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি করা সম্ভব হবে। পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি এর উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিতকরণ ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের বিষয়ে সরকার চিন্তা করছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিবছর দেশের চাহিদা মেটাতে ৮ থেকে ৯ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রতিবেশী ভারত থেকে আমদানি করা হতো। এ বছর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে সমস্যা হয়েছে। মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করছে বাংলাদেশ। এখনো পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ চীন থেকে আমদানি করা হয়। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে পর্যাপ্ত রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি পেঁয়াজের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।