খবর৭১ঃ গত বছর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের হৃৎপিণ্ডে ঘন ঘন শর্টসার্কিট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) প্রায় চার মাস ধরে চিকিৎসাধীন ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ নামে খ্যাত এই দাপুটে নেতা।
আজ সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কারা তত্ত্বাবধানে সম্রাট বিএসএমএমইউয়ের সিসিইউ ২-এ চিকিৎসাধীন। গত বছরের ২৪ নভেম্বর বিএসএমএমইউয়ের অধ্যাপক চৌধুরী মেসকাত আহম্মেদের অধীনে ভর্তি হন তিনি।
সিসিইউয়ের বিভিন্ন সূত্র জানায়, সম্রাটের দেখাশোনার জন্য দুজন কারারক্ষী সব সময় নিয়োজিত থাকেন। নিরাপত্তার জন্য বাইরে সাদা পোশাকে কয়েকজন গোয়েন্দা সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।
সেখানে সম্রাটের দিন কেমন কাটছে? সিসিইউর সূত্র জানায়, দিনের বেশির ভাগ সময় শুয়ে-বসে পার করেন ‘ক্যাসিনো সম্রাট’। মাঝেমধ্যে পেপার পড়তে দেখা যায় তাকে। হাসপাতালের খাবার খেতে পারেন না বলে সব সময় বাইরে থেকে খাবার আসে তার।
আজ সোমবার দুপুরে সাবেক যুবলীগ নেতা সম্রাটের খোঁজ নিতে এই প্রতিবেদক গিয়েছিলেন বিএসএমএমইউতে। সিসিইউয়ের ভেতরে সম্রাটকে দেখা যায় আকাশি রঙের হাফহাত শার্ট ও গাঢ় বেগুনি রঙের বার্মিজ লুঙি পরিহিত। তার বিছানার পাশে বসা দুজন পোশাকধারী কারারক্ষী। আর তাদের পাশে একজন সাদা পোশাকের ব্যক্তিকে দেখা যায় সেখানে। সম্রাট তখন বিছানা থেকে নেমে ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে ওয়াশ রুমের দিকে যান। অন্য সব বিছানায় রোগীরা শুয়ে আছেন।
কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসাধীন বন্দীদের সাক্ষাতের সুযোগ থাকলেও সম্রাটকে দেখতে তার আত্মীয়স্বজন কেউ সেখানে খুব একটা যান না বলে জানান সিসিইউ সূত্র। গত সাড়ে তিন মাসে তার নজরে পড়েনি কেউ। সিসিইউতে থাকা কারাবন্দি সম্রাট আর কত দিন এখানে অবস্থান করবেন, সে কথা জানাতে পারেননি সূত্র কিংবা চিকিৎসক।
ইসমাঈল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে তার গ্রেপ্তারের বহু আগে। বাইপাস সার্জারি। এরই প্রভাবে নাকি মাঝেমধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ছাড়া তার হৃৎপিণ্ড জন্ম থেকে বড় বলে জানান চিকিৎসক। আর তাতে তার হৃৎপিণ্ডে শর্টসার্কিট হয়।
সম্রাটের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা টাইমসকে বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী মেসকাত আহম্মেদ বলেন, ‘ওনার (সম্রাট) হার্টের একটি বাল্ভ আগে থেকে নষ্ট ছিল, যা আগে অপারেশন করা হয়েছে। যাদের এ রকম সমস্যা থাকে তাদের রক্ত তরল করতে হয়। আবার রক্ত তরল করার ওষুধ বেশি মাত্রায় হলে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে।’
এ ছাড়া জন্মগতভাবে সম্রাটের হৃৎপিণ্ড একটু বেশি চওড়া বলে জানান অধ্যাপক চৌধুরী মেসকাত আহম্মেদ। বলেন, ‘এটা তার বংশগত রোগ। এর ফলে তার হার্টে শর্টসার্কিট হয়, যা প্রতি সেকেন্ডে হার্টবিট করে। এই শর্টসার্কিটের কারণে তার প্রাণনাশের সম্ভাবনাও থাকে।’
দীর্ঘদিন সিসিইউতে রাখার কারণ হিসেবে অধ্যাপক চৌধুরী মেসকাত আহম্মেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখন তার শর্টসার্কিটের সমস্যা ঘন ঘন হচ্ছে। রাত-বিরাত এমন সমস্য হলে তাকে নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। হার্টে এই শর্ট সার্কিটের চিকিৎসা বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগে নেই। এই চিকিৎসা রয়েছে জাতীয় হৃদরোগ ইনিস্টিটিউ, ল্যাবএইড ও আজগর আলী হাসপাতালে।’
তাহলে এখানে কেন সম্রাট? অধ্যাপক চৌধুরী মেসকাত বলেন, ‘তার চিকিৎসার জন্য যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ড হাসপাতালের পরিচালককে এ ব্যাপারে চিঠি লিখেছে। এখন পরিচালক তার চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
গত বছরের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সেখান থেকে তাদের ঢাকায় এনে সম্রাটের কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। সেখান থেকে ক্যাঙারুর দুটি চামড়া, মাদক, অস্ত্র জব্দ করা হয়। এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে এক হাজার ১৬০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে সম্রাটের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করে। পরে ৯ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় র্যাব।
সম্রাটের গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার সাহেব বাজার এলাকায়।
যুবলীগের সাবেক এই প্রভাবশালী নেতাকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা প্রচলিত আছে। প্রতি মাসে অন্তত ১০ দিন সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলা ছিল তার নেশা। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় জুয়ার আসর মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনোতে ভিআইপি জুয়াড়ি হিসেবে পরিচিত সম্রাট, যেখানে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে আসে জুয়াড়িরা। সম্রাট প্রথম সারির জুয়াড়ি হওয়ায় তাকে সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট থেকে মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনো পর্যন্ত তাকে নিয়ে যাওয়া হতো বিলাসবহুল লিমুজিন গাড়িতে করে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচার আছে, যুবলীগের দিবসভিত্তিক কর্মসূচি এবং রাজধানীতে আওয়ামী লীগের জনসভাগুলোতে লোকসমাগম ঘটাতে এবং বড় শোডাউনে থাকত সম্রাটের লোকজনের ভ’মিকা।