খবর৭১ঃ
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সিংহদুয়ার হিসেবে পরিচয় পেতে যাওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের অত্যাধুনিক সংযোগ সড়ক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আজ। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ঢাকা অংশের ৪ লেনের ৫৫ কিলোমিটার এই জাতীয় মহাসড়ক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মহাসড়কটি উদ্বোধন করবেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত সড়কটি তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানমালা শুরুর পাঁচ দিন আগেই চালু করা হচ্ছে। যেটিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে জাতির জন্য উপহার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আজ উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো দিন এই মহাসড়কে গাড়ি নিয়ে টুঙ্গিপাড়া যাবেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। মহাসড়কটি উদ্বোধনের জন্য ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘যাত্রাবাড়ী-মাওয়া এবং পাচ্চর-ভাঙ্গা জাতীয় মহাসড়ক-৪ লেনে উন্নয়ন প্রকল্প’ হিসেবে পরিচিত এই মহাসড়কটি ২০১৬ সালের ৩ মে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক হিসেবে এর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের বিষয়টি নিজে থেকেই তদারকি করেন। পূর্বেকার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে এর আধুনিকায়ন এবং দৃষ্টিনন্দন উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয় যা নির্ধারিত সময়ের আগেই চালু করা হচ্ছে। মহাসড়কটি নির্মাণে ১১ হাজার কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয় যার সবটাই বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে। মহাসড়কটি চালু হলে পদ্মা সেতুর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ সহজতর হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হবে। পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুততর ও সহজ হবে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশে বিদ্যমান সড়ক অবকাঠামোর মধ্যে এই মহাসড়কটি অত্যাধুনিক মানসম্পন্ন। আগে এই মহাসড়কটি দুই লেনে ছিল। এখন নতুনভাবে তা চার লেনে উন্নীত হয়েছে। মহাসড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য রয়েছে ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত পৃথক লেন। মাঝ বরাবর রয়েছে ৫ মিটার প্রশস্ত মিডিয়ান। ভবিষ্যতে এই মিডিয়ান ব্যবহার করে মেট্রোরেল অথবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে। মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে করিডোর-১ এর অন্তর্ভুক্ত যা আন্তর্জাতিক মহাসড়কের অন্তর্ভুক্ত এবং সুবিধা সংবলিত। সড়কটিতে ৫৪টি কালভার্ট, ১৯টি আন্ডারপাস, ৪টি বড়ো সেতু, ২৫টি ছোটো সেতু, ৫টি ফ্লাইওভার, ২টি ইন্টারচেঞ্জ এবং ৪টি রেলওয়ে ওভারপাস রয়েছে। ধলেশ্বরী, আড়িয়াল খাঁ এবং কুমার নদের ওপর এসব সেতু নির্মাণ করা হয়। নিরবচ্ছিন্ন ধীরগতির যানবাহনসমূহ পৃথক সার্ভিস লেন ব্যবহার করে এলজিইডির রাস্তাসমূহের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে। যা প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ জনগণের যাতায়াতকে নিরাপদ ও সুগম করবে। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার কারণে মহাসড়কটি একটি একসেস কন্ট্রোল এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তরিত হয়েছে। মহাসড়কের দুপাশে ও মিডিয়ানে বৃক্ষরোপণ করে একে পরিবেশবান্ধব ও সবুজায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে রয়েছে আধুনিক ট্রাফিক ডিজাউন সমন্বিত ব্যবস্থা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর এবং ফরিদপুর জেলার অংশ বিশেষের সঙ্গে মহাসড়কটি পদ্মা সেতুর উভয়পাশ সংযুক্ত হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত এবং পাচ্চর-ভাঙা অংশের নির্মাণকাজের জন্য ৬০ হাজার ৩৫৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং তা সমাপ্তির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু তার তিন মাস আগেই মহাসড়কটি সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। এই মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে ৬ কিলোমিটার সেতুর মধ্যে ৪ কিলোমিটারই দৃষ্টিসীমার মধ্যে এসেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগেই মহাসড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হওয়াকে জাতীয় এই প্রকল্পের অনেক বড়ো অগ্রগতি হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।