খবর৭১ঃ সংসার ভাঙার খবরে গণমাধ্যমগুলোতে শিরোনামে উঠে এসেছেন এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর।
বনিবনা না হওয়ায় স্বামী অনিক মাহমুদ হৃদয়কে তালাক দিয়েছেন তিনি। সেই তালাকনামা ফাঁসও হয়েছে। যেখানে স্বামী অনিকের বিরুদ্ধে নানা গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন শাবনূর।
সেসব অভিযোগের মধ্যে একটি হলো, ছেলে হওয়ার পর থেকে বাড়ি না এসে অন্য নারীর কাছে গিয়ে থাকতেন অনিক।
এসব অভিযোগের পাল্টা জবাবে শাবনূরের বিরুদ্ধে অনিক অভিযোগ তুলেন, তাকে বিয়ে করার আগে এক চীনা নাগরিককে বিয়ে করেছিলেন শাবনূর এবং ইস্কাটনের বাসায় ওই চীনা নাগরিকের সঙ্গে কয়েকবার হাতেনাতে ধরাও পড়েন শাবনূর!
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে গত শুক্রবার বিকালে ফোন দিয়ে অনিক এক গণমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েন, ‘শাবনূরকে আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ করলাম। আমার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে তাকে। আমি যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব। আর তা না পারলে তাকে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে।’
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘বিয়ের পর শাবনূর বিষয়ে এমন তথ্য পাই যে, আমি বিস্মিত ও হতাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু কাউকে জানতে দিইনি। কারণ ও সেলিব্রেটি। জানলাম, একজন চীনা নাগরিকের সঙ্গে শাবনূরের বিয়ে হয়েছিল। স্বামী হিসেবে এটা শোনা বিস্ময় নয়কি?
এরপর তিনি বলেন, আড়াই বছর আগে একবার হঠাৎ করে আমাকে কিছু না জানিয়ে শরীফ নামের একজন লোকের সঙ্গে মালয়েশিয়া চলে যায় শাবনূর। সেই অন্যায়ের বেলায়ও তাকে মাফ করে দিই। কাউকে জানাইনি।
অনিকের দাবি, তিনি নন, মদ্যপ থাকতেন শাবনূর। আমাদের দুজনের রক্ত পরীক্ষা করা হোক। সেই টেস্টেই বের হবে কে মাদকাসক্ত।
প্রমাণ দিতে অনীক বলেন, আমি খুব স্বাস্থ্য সচেতন। খুব ভোরে উঠি ঘুম থেকে। মর্নিং ওয়াক করি। জিম করি। নিজের বডি ফিট রাখি। কারণ অনেক বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে আমাকে থাকতে হয়। আমি বডি বিল্ডারদের শরীর ফিট রাখতে পরামর্শ দিই। আর সেই আমি কি করে মাদকাসক্ত হতে পারি? ব্লাড টেস্টে আমার মধ্যে মাদকাসক্তের কোনো নমুনা পাওয়া গেলে যে শাস্তি দেয়া হবে মেনে নেব।
শাবনূরের সঙ্গে অনেকদিন ধরে থাকছেন না এটা তো সত্যি? এমন প্রশ্নে বিষয়টি স্বীকার করে অনিক বলেন, আমি আসলে এসব মেনে নিতে পারছি না। স্ত্রীকে মদ্যপ অবস্থায় পেলে একজন স্বামী তা তো মেনে নিতে পারে না। তাই দূরে থেকেছি। যে কারণে গত দেড় বছর ধরে সন্তানকে দেখার সুযোগ থেকে আমি বঞ্চিত।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই অবশ্য গুঞ্জন ছিল, স্বামী অনিকের সঙ্গে থাকছেন না শাবনূর। সে সময় মিডিয়াপাড়ায় বলাবলি হয়েছিল, শাবনূরের সংসার ভেঙে গেছে।
তবে সেসব গুঞ্জন বরাবরই অস্বীকার করে এসেছিলেন শাবনূর ও অনিক দুজনই।
এবার সেসব গুঞ্জন নিজেই সত্যি প্রমাণ করলেন শাবনূর।
বনিবনা না হওয়ায় স্বামী অনিক মাহমুদ হৃদয়কে তালাক দিয়েছেন তিনি।
২৬ জানুয়ারি এ নায়িকার স্বাক্ষর করা একটি তালাক নোটিশ অ্যাডভোকেট কাওসার আহমেদের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে স্বামীর ঠিকানায়। তালাক নোটিশের অনুলিপি অনিকের এলাকার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং কাজী অফিস বরাবরও পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে সাক্ষী হিসেবে নুরুল ইসলাম ও শামীম আহম্মদ নামে দুজনের নাম উল্লেখ রয়েছে।
ডিভোর্স নোটিশে শাবনূর অভিযোগ করেছেন, ‘আমার স্বামী অনিক মাহমুদ হৃদয় সন্তান এবং আমার যথাযথ যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে না। সে মাদকাসক্ত। অনেকবার মধ্যরাতে মদ্যপ অবস্থায় বাসায় এসে আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমাদের ছেলের জন্মের পর থেকে সে আমার কাছ থেকে দূরে থাকছে এবং অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে আলাদা বসবাস করছে।’
‘একজন মুসলিম স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী যে ব্যবহার করে অনিক সেটা করছে না, উল্টো নানাভাবে আমাকে নির্যাতন করে। এসব কারণে আমার জীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। চেষ্টা করেও এসব থেকে তাকে ফেরাতে পারিনি। বরং আমার সন্তান এবং আমার ওপর নির্যাতন আরও বাড়তে থাকে। উপরোক্ত কারণগুলোর জন্যই তার সঙ্গে আমার আর বসবাস করা সম্ভব নয় এবং আমি কখনও সুখী হতে পারব না। তাই নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং সুন্দর জীবনের জন্য তার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই। মুসলিম আইন এবং শরিয়ত মোতাবেক আমি তাকে তালাক দিতে চাই। আজ থেকে সে আমার বৈধ স্বামী নয়, আমিও তার বৈধ স্ত্রী নই।’
এদিকে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন শাবনূর। তালাক নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি যুগান্তরকে বলেন, হ্যাঁ, আমি বাধ্য হয়েই তালাক নোটিশ পাঠিয়েছি। আসলে আমার কিছু করার নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর অনিক মাহমুদ হৃদয় নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আংটি বদল করেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। এরপর ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারা বিয়ে করেন। সেই সংসারে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর আইজান নিহান নামে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। এ সন্তানকে নিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময় অস্ট্রেলিয়ায় কাটান এ চিত্রনায়িকা। দেশটির নাগরিকত্বও পেয়েছেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।