খবর৭১ঃ দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর প্রথম আঘাত দেশের শেয়ারবাজারে। সোমবার একদিনেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। এতে ডিএসইর সূচক কমে ২৮০ পয়েন্ট। শতকরা হিসাবে যা সাড়ে ৬ শতাংশ।
এতে একদিনেই ডিএসইর ১৭ হাজার কোটি টাকার বাজারমূলধন উধাও হয়ে গেছে। শেয়ারবাজারে গত ৯ বছরে এটিই সর্বোচ্চ পতন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার পাশাপাশি আরও একটি কারণ থাকতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ালটনের শেয়ার প্রাইসে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠান অতিমূল্যায়িত হতে যাচ্ছিল। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আপত্তি তুলতে পারে এই আশঙ্কা ছিল সংশ্লিষ্টদের।
এটিও পতনের কারণ হতে পারে। তবে সোমবার সারা বিশ্বে শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। বিশ্বের বড় ২০টি শেয়ারবাজারের সবগুলোতেই পতন হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় হওয়ায় পাকিস্তানে লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিএসইসির কোনো সার্কুলার বা অন্য কোনো সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে পতন হয়নি। ফলে এখানে বিএসইসির কিছু করার নেই।
তিনি বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেবে, আইনের ব্যত্যয় না থাকলে আমরা সেটি মেনে নেব। করোনাভাইরাসের কারণে পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাকিস্তানে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও স্টক এক্সচেঞ্জ মনে করলে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেখানে বিএসইসির কিছু করার নেই।
দেশে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে, এমন খবরের পর সোমবার ছিল প্রথম লেনদেন। আর লেনদেনের শুরু থেকেই কমতে থাকে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইতে রোববার ৩৫৫টি কোম্পানির মধ্যে ৩৫৩টিরই শেয়ারের দাম কমেছে।
মাত্র একটির দাম বেড়েছে। অপরিবর্তিত রয়েছে আরও একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম। লেনদেনকৃত ২০ কোটি ৯৯ লাখ শেয়ারের মোট মূল্য ছিল ৪৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৭৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ৮৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬৯ পয়েন্ট কমে ৯ হাজার ২৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
একদিনে ডিএসইর বাজারমূলধন কমেছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এদিন ডিএসইর বাজারমূলধন ৩ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে ৩ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। সারা পৃথিবীতে সোমবার শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে।
বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, এতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ দ্রুতই এটি কেটে যাবে। এছাড়াও শেয়ারবাজারে ব্যাংকের যে বিনিয়োগের কথা ছিল, সেটিও কার্যকরে উদ্যোগ নেয়া হবে।
সারা বিশ্বেই পতন : শুধু বাংলাদেশে নয়, সোমবার বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে কাতারে। একদিনে দেশটির শেয়ারের দাম সূচক ৯ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে।
থাইল্যান্ডে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৮ শতাংশ, ভারতে ৫ দশমিক ৫১, যুক্তরাজ্যে ৬ দশমিক ৪৭, সৌদি আরবে ৬ দশমিক ৯৮, পাকিস্তান ২ দশমিক ৫৭, শ্রীলংকা ২ দশমিক ৫৭, চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জে ৩ দশমিক ০১, শেনঝেন ৪ দশমিক ০৯, জাপানের নিকি সূচক ৫ দশমিক ০৭, টোকিও ৫ দশমিক ৬১, হংকং ৪ দশমিক ২৩, সিঙ্গাপুর ৬ দশমিক ০৩, ভিয়েতনাম ৬ দশমিক ৪৪, ইউরোপের এসঅ্যান্ডপি ৩ দশমিক ৭৫ এবং ওমানের শেয়ারবাজারের সূচক ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ পতন হয়েছে।
শীর্ষ দশ কোম্পানি : রোববার ডিএসইতে যে সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হল- স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, সামিট পাওয়ার, সী পার্ল বীচ, ব্র্যাক ব্যাংক, ওরিয়ন ইনফিউশন, ব্যাংক এশিয়া, ভিএফএস থ্রেড এবং ওরিয়ন ফার্মা।
দাম বেড়েছে মাত্র ১টি কোম্পানির শেয়ারের। আর তা হল মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। অন্যদিকে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হল- প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, আনলিমা ইয়ার্ন, বীকন ফার্মা, সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, ন্যাশনাল টিউবস, ওয়াইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড, পেনিনসুল চিটাগং এবং সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।