খবর৭১ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের আবেদনকে চিরন্তুন আখ্যায়িত করে বলেছেন, এটি সমসাময়িক কালেও যেমন আগামীতেও তেমনি, যুগ যুগ ধরে দেশের মানুষের পাশাপাশি বিশ্ববাসীকে মুক্তির চেতনায় উজ্জীবিত করবে।
তিনি বলেন, ‘৪৯ বছর ধরে জাতির পিতার ভাষণই একমাত্র ভাষণ যেটা সমগ্র পৃথিবীতে এখনও আবেদন রেখে যাচ্ছে। আর এই ভাষণ যুগ যুগ ধরে শুধু এদেশেরই নয়, সারা বিশ্বের মানুষকে উজ্জীবিত করবে।’
৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ভাষণ যে কতবার, কত দিন, কত ঘণ্টা, কত মিনিট বেজেছে, কত মানুষ এই ভাষণ শুনেছে তা কেউ হিসেব করে বের করতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় মুজিববর্ষে দেশে আর কেউ গৃহহীন থাকবে না মর্মে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনা তার সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষার সম্প্রসারণ এবং স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে আসার উদ্যোগসমূহ তুলে ধরে বলেন, ‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে-এটা হতে পারেনা।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন,‘ জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীরও দেশের ও জাতির জন্য একটা দায়িত্ব আছে। সেটা যদি করতে পারেন তবে তাই হবে স্বার্থকতা।’ তিনি বলেন, ‘ধরে নিন এটাই আপনাদের কাছে আমার একটা দাবি। আপনারা ঘর করে দেবেন প্রয়োজনে টাকা আমি দেব।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন।
আলোচনা সভায় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম এবং মুহম্মদ ফারুক খান এবং ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বক্তৃতা করেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং মাহবুব-উল-আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফি এবং উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস.এম. মান্নান কচি ও বক্তৃতা করেন।
শিমূল মুস্তফা অনুষ্ঠানে কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা- ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’, আবৃত্তি করেন। সংগঠনের প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভা পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তার সরকার এবং দল মুজিববর্ষ উদযাপনে অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং সেখানে অনেক অর্থও ব্যয় হবে। তবে, মুজিবর্ষে দেশের সকল মানুষকে বাসগৃহের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারলে এর চেয়ে বড় কাজ আর হতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা এ সময় জাতির পিতার ভাষণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্বৃত করেন। জাতির পিতা বলেছিলেন,‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবন পায়।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতির পিতা সবসময়ই বলেছেন- ‘এই বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মত মৌলিক চাহিদাগুলো তিনি নিশ্চিত করতে চান।’ এজন্য স্বাধীনতার পর তিনি যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেই সংবিধানেও এই মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতের কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও আমাদের দেশে নদী ভাঙ্গনে গৃহহীন হয়ে যায়। এখনও কিছু মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় যারা ভূমিহীনও গৃহহীন। আমি চাই এই মুজিবর্ষের ভেতরেই বাংলাদেশের একটা মানুষও গৃহহীন থাকবেনা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে আমার অনুরোধ থাকবে আওয়ামী লীগের এত নেতা-কর্মী, এত আদর্শের সৈনিক আপনারা যার যার নিজের গ্রামে, নিজের এলাকায়, নিজেরা একটু খোঁজ নেন, কয়টা মানুষ গৃহহীন বা ভূমিহীন আছে। তাদেরকে আমরা ঘর করে দেব।’