খবর৭১ঃ দিল্লিতে মুসলমানদের হত্যার ঘটনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামি জনতা। শুক্রবার বাদ জুমা সমমনা কয়েকটি ইসলামি দলের ব্যানারে হাজারো জনতা এতে অংশ নেন। তারা যেকোনো মূল্যে মোদির আগমন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
সমাবেশ থেকে মোদির আগমনের প্রতিবাদে আগামী ১২ মার্চ রাজধানীসহ সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়।
জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের আমির ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। ঢাকায় আসর নামাজের পর এ মানববন্ধন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী, সদরঘাট থেকে টঙ্গী পর্যন্ত হবে।
মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের ছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। ওই দিন পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, ১২ তারিখ বাদ আসর সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে। কোনোভাবেই বাংলার মাটিতে আমরা মোদিকে পা রাখতে দেব না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের আহ্বান- দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর যে নির্মম অত্যাচার চালানো হয়েছে এরপর তৌহিদি জনতা মোদির মতো খুনিকে বাংলার মাটিতে পা রাখতে দেব না। আমরা আগেও এ কথা বলেছিলাম, আজও বলছি।’
জুমার নামাজ ঘিরে বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক জনসমাগম হয়। নামাজের এক ঘণ্টা আগে থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে মুসল্লিদের ঢল নামে। নামাজ শেষে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে একটি মিছিল পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় মোদির আগমনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
নাগরিকত্ব প্রমাণে নতুন আইনের বিরোধিতা করায় ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে টানা চার দিন মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সহিংসতা করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এতে নিহত হয়েছেন মোট ৫৩ জন। আহত দুই শতাধিক। মসজিদ-মাদ্রাসা ভাঙচুর করে হনুমানের পতাকাও উড়িয়ে দেন নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে থাকা নরেন্দ মোদির সরকারের সমর্থকরা। এ নিয়ে বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বাংলাদেশের মুসলমানরাও এর প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদকারীরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদির মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গুজরাটে মুসলিমরা গণহত্যার শিকার হয়েছিল। মোদির হাত মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মোদির আগমনের বিরোধিতা করছেন অনেকেই। তবে, গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ১৭ মার্চে মোদির আগমনে সরকার প্রস্তুত বলে জানান। অন্যদিকে একইদিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও বাংলাদেশে মোদির দুই দিনের সফর নিশ্চিত করেছে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি ১৭ মার্চ মুজিববর্ষ উদযাপনে যোগ দিতে ঢাকা সফর করবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের অক্টোবরে দিল্লি সফরকালে মোদিকে ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণটি গ্রহণ করেন এবং তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান।